কে হবে চকরিয়ার পৌর পিতা

এম.আর মাহমুদ

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন আগামী ১১ এপ্রিল। নির্বাচনে মেয়র পদে কোমরে গামছা বেঁধে নেমেছে ৩ প্রার্থী। ৩ জনেই যোগ্য প্রার্থী। তারা শতভাগ আশাবাদী জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তবে ফায়সালার মালিক পৌর এলাকার ভোটারেরা। নির্বাচনের ঘনিয়ে আসলেও ভোটারদের তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই বলতে হয় ভোটের ব্যাপারে ভোটারদের স্মরণ নেই। কিন্তু প্রার্থীদের ঘুম নেই।

মেয়র পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী। অন্যদিকে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াবুল হক। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও যুক্তরাজ্য আইনজীবী পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এডভোকেট ফয়সাল ছিদ্দিকী। ৩ জনেই বলতে হয় একই দলের। তাই রসিকজনদের মন্তব্য ‘তারা এক মামার ৩ ভাগিনা’। এবারের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম হায়দার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও দলীয় নির্দেশে মনোনয়ন পত্র জমা দেননি।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে ৫১ জন। সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন। ইতিমধ্যে রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই সম্পন্ন করেছে। আগামীকাল বুধবার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২৫ তারিখেই প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। হয়তো তখনই ভোটারদের চেতনা ফিরে আসবে। তবে প্রার্থীরা কোনভাবেই বসে নাই। সরবে নিরবে পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের হার্ডভিড় ততই বাড়ছে। ভোটারদের প্রশ্ন হচ্ছে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে কে হবে পৌর পিতা? সাধারণ ভোটারদের অভিমত তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে সব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে। তারা ভাবছে সৎ, যোগ্য, বিনয়ী, নিরাপদ ও উন্নয়নবান্ধব প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবে। অনেকে ভাবছে সেই সৌভাগ্য কপালে জুটবে কিনা!

চকরিয়া নির্বাচন অফিসের তথ্য মোতাবেক চকরিয়া পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২৫৮৯৯ জন আর মহিলার সংখ্যা ২২৮২৫ জন, মোট ভোটারের সংখ্যা ৪৮৭২৪ জন। এ পরিমাণ ভোটার ১৮টি ভোট কেন্দ্রে ১৩৯টি কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে এবারের ভোট সনাতন পদ্ধতিতে হচ্ছে না। বহুল আলোচিত ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তবে ৯০ ভাগ ভোটার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানে কোন ধরণের ধারণা নাই। কি জানি নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সাধারণ ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদান সম্পর্কে সচেতনতামূলক ধারণা দেয় কিনা। মনে হচ্ছে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদানের ক্ষেত্রে ভোটারদের ও ভোট গ্রহণকারীদের কর্মকর্তাদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে।

এবারের নির্বাচনে বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। তাদের ভাষায় বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোন অর্থ নেই। এ ক্ষেত্রে চকরিয়া বিএনপি’র একজন দায়িত্বশীল নেতা মন্তব্য করতে শোনা গেছে। কাগজের ফুলে গোলাপের সৌরভ আশা করা অনেকটা বাতুলতা। যাক! এসব কথা শোনে লাভ কি? যেহেতু তারা ভোটের মাঠে নেই। তবে বিএনপি সমর্থিত ভোটারেরা একেবারে ভোট কেন্দ্রে যাবে না এমন কথাও কেউ বলছে না। চকরিয়া পৌরসভায় পদ-পদবীধারী ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন, ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফোরকান ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বেশক’বার নির্বাচিত কাউন্সিলর রাশেদা বেগম। সে কারণেই মনে হচ্ছে বিএনপি সমার্থিত অনেক ভোটারেরও পরিবেশ থাকলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

তবে এখনও পৌর নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি বলে পৌর এলাকার বেশিরভাগ ভোটারের অভিমত। চকরিয়া পৌরসভা ১৯৯৪ সালে এ পৌরসভা গঠিত হয়েছে। ৩ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামীলীগের নেতা মরহুম এডভোকেট আমজাদ হোসেন, চেয়ারম্যান/মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন আনোয়ারুল হাকিম দুলাল, বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম এম.এ, নুরুল ইসলাম হায়দার ও বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী। তারা সকলেই পৌরসভার উন্নয়নে কম বেশি ভূমিকা রেখেছে। কাউকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রবীনদের ভাষায় ‘ময়ূরকে শুধু সুন্দর বললে হবে না, পেঁচাকে অসুন্দর বলা বেমানান।’ অতএব চকরিয়া পৌরবাসী প্রত্যাশায় রয়েছে ১১ এপ্রিলের নির্বাচন কেমন হয় আর কে হবে পৌর পিতা?