সিবিএন ডেস্ক: ‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’। ঠিক এ প্রবাদের মতোই ভয়াবহ দরপতনে বিনিয়োগকারীরা যখন পুঁজি হারাচ্ছেন, তখন কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণে মেতেছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তা ও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তা ও পরিচালকরা।

কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণে গেলেও বিএসইসি থেকে বলা হচ্ছে, তারা ইনোভেশন প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে গিয়েছেন। আর ডিএসই বলছে, রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছর ডিএসই ঢাকার বাইরে মিটিং করে। এখন যেহেতু বিএসইসি কক্সবাজারে রয়েছে, তাই কক্সবাজারে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। অবশ্য এ প্রমোদ ভ্রমণে বিএসইসি ও ডিএসইর অনেকেই পরিবার নিয়েও গেছেন।

 আমাদের একটা ইনোভেশন প্রোগ্রাম ছিল, সে কারণে কক্সবাজারে এসেছি। ডিএসই এসেছে ডিএসই’র মতো 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে রয়েল টিউলিপ সি পাল বিচ রিসোর্টে উঠেছেন বিএসইসি ও ডিএসই কর্মকর্তারা। গত ১৮ মার্চ শেয়ারবাজারে বড় ধস নামার দিন ঢাকা থেকে প্লেনযোগে বিএসইসি ও ডিএসই কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ কক্সবাজারে পা রাখেন। দু’দিনের ভ্রমণ শেষে শনিবার (২০ মার্চ) সকাল, দুপুর ও বিকালের ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইটে ঢাকা ফিরছেন প্রমোদ ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীরা।

এ ভ্রমণে বিএসইসি ও ডিএসইর কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, সে সংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসইর খরচের একটি তালিকা জাগো নিউজের হাতে এসেছে। খরচের এই তথ্য অনুযায়ী, ৪০ জনের প্লেন ভাড়া ধরা হয়েছে আট লাখ টাকা। এতে একজনের প্লেন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এছাড়া স্থানীয় পরিবহন ভাড়া ধরা হয়েছে চার লাখ টাকা।

এদিকে বিশাল বহর নিয়ে ডিএসই ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তবে ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেছেন, খরচের অঙ্ক এতো হবে না।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, কতজন কক্সবাজারে এসেছেন এবং কত টাকা খরচ হবে আমি এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারব না। টাকা কত খরচ হবে সেটা হিসাব করলে বোঝা যাবে। তবে বলতে পারি, এটা (খরচ) খুব বড় অঙ্কের হবে না। আমার বিশ্বাস আপনি যেটা বলছেন (কোটি টাকা) খরচ অতো হবে না।

 কতজন কক্সবাজারে এসেছেন এবং কত টাকা খরচ হবে আমি এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারব না। টাকা কত খরচ হবে সেটা হিসাব করলে বোঝা যাবে। তবে বলতে পারি, এটা (খরচ) খুব বড় অঙ্কের হবে না। আমার বিশ্বাস আপনি যেটা বলছেন (কোটি টাকা) খরচ অতো হবে না 

বিএসইসি ও ডিএসইর বিশাল বহর যেদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, সেদিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৮১ পয়েন্ট পড়ে যায়। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়াই এ ধসের অন্যতম কারণ। তবে অভিযোগ উঠেছে, এ গুজব ছড়াতে ডিএসই সহায়তা করেছে। কারণ লেনদেন চলাকালে হঠাৎ ডিএসইর ওয়েবসাইটে লাইভ আপডেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) লাইভ আপডেট বন্ধ হওয়ার আগে এক ঘণ্টা ১৪ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৩ পয়েন্ট কমে যায়। এরপরই বন্ধ হয়ে যায় ডিএসইর লাইভ আপডেট। ১১টা ১৪ মিনিটে বন্ধ হয়ে যাওয়া লাইভ আপডেট ৪৬ মিনিট বন্ধ থাকার পর দুপুর ১২টা থেকে আবার শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার বড় ধস নামলেও এক মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে মন্দা প্রবণতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশাল বহর নিয়ে কক্সবাজারে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিএসই চেয়ারম্যান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, এটার কারণ তো এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। রেওয়াজ অনুযায়ী বছরে একবার ঢাকার বাইরে মিটিং করা হয়। এবার একই সময়ে বিএসইসি এসেছে ওনাদের কার্যক্রমে, ওনাদের সঙ্গে সেই বৈঠকটা কক্সবাজারে হলো।

তিনি বলেন, ডিএসই বছরে এ রকম এক-আধবার বাইরে যায়। এবার বিএসইসি কক্সবাজারে এসেছে, সে কারণে ডিএসইও এসেছে।

বিএসইসি কর্মকর্তাদের কক্সবাজারে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের একটা ইনোভেশন প্রোগ্রাম ছিল, সে কারণে কক্সবাজারে এসেছি। ডিএসই এসেছে ডিএসই’র মতো।

এদিকে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে কক্সবাজার ভ্রমণে গেলেও কর্মীদের পাওনা দুই কোটি ৬৫ লাখ ৯১ হাজার ৪৬২ টাকা পরিশোধ করা নিয়ে টালবাহানা করছে ডিএসই। সম্প্রতি বাণিজ্যিক অধিদফতর ঢাকার একটি অডিটে ডিএসইর কর্মীদের পাওনা শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বাবদ এ টাকা পরিশোধ না করার তথ্য উঠে আসে। এর ভিত্তিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিন কার্যদিবসের মধ্যে কর্মীদের পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ডিএসইকে নির্দেশ দেয় বিএসইসি।

বিএসইসির ওই নির্দেশে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও কর্মীরা তাদের পাওনা বুঝে পাননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, বিএসইসি থেকে চিঠিটা মেইলে এসেছে। সরাসরি চিঠি না আসার কারণে চিঠিটা বিএসইসি দিয়েছে কি-না তা জানার জন্য বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএসইসির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিএসইসি টাকা দিয়ে দিতে বললে আমরা অবশ্যই দিয়ে দেব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি আমার সঠিক জানা নেই। এটা জেনে তারপর জানাতে পারবো। আজ (শনিবার) অফিস বন্ধ থাকায়, এখন জানা সম্ভব নয়। -জাগো নিউজ