নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজার শহরের বদরমোকাম মসজিদ সংলগ্ন কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবন কেটে বাঁকখালী নদীর প্রায় পাঁচ একরের মতো জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে একটি  ‍ভূমিদস্যু চক্র। চারপাশে টিনের ঘেরা দিয়ে ভেতরে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করে মাটি ভরাট করছে এই দখলবাজরা। পাশাপাশি এই অবৈধ স্থাপনায় নানা অপকর্মসহ অনৈতিক কর্মকান্ড চলারও অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। একপর্যায়ে কয়েক বছর পূর্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) অভিযান চালিয়ে সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং অবৈধ বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়ে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয়া হয়।

এদিকে জেলা প্রশাসনের বৃহস্পতিবার সকালের অভিযানে একই সাথে নতুন বাহারছড়া ছিদ্দিক আহম্মদ কোম্পানি নদীর তীরের উপর অবৈধভাবে নির্মিত ইটের তৈরী দেয়ালের কিছু অংশও উচ্ছেদ করে অভিযান পরিচালনাকারি দল। একই সাথে ছিদ্দিক কোম্পানীকে প্রাথমিক ভাবে ১ হাজার টাকা প্রতিকী জরিমানা করা হয়। সেখানে কাঠের তৈরী নির্মিত ট্রলার ও অবৈধ দেয়াল নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে তাকে ৪ দিনের সময় দেন প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকাল ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে বাঁকখালী নদীর ওই জায়গার প্রায় দুই একর দখলমুক্ত করে এই অভিযান পরিচালনাকারি টিম। উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু এমংমারমা মং।

সূত্রমতে, শহরের বদরমোকামস্থ কস্তুরাঘাট এলাকার বাঁকখালী নদীর জমি অবৈধভাবে দখলে নেয়া হান্নানের বিরুদ্ধে দুই বছর আগে জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে। পরে ওই স্থাপনায় “নৌযান মেরামত কারখানা নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থান” উল্লেখ্য করে সাইবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেই সাইন বোর্ডটি বেশি দিন স্থায়ী হতে দেয়নি ভূমিদস্যুচক্র। এসময় দখলদারের কাছ থেকে অত্যাধুনিক বাড়ি সরিয়ে নিতে লিখিত স্ট্যাম্প নিয়েছিলো জেলা প্রশাসন। এতেই নিরব প্রশাসন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিছুদিন পর ফের দখলে নিল অর্ধশত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি প্রায় ১০ একর নদীর জমিটি।

সদর ভূমি অফিস সূত্র জানায়, বদরমোকাম মসজিদের উত্তর পাশ থেকে বাঁকখালী নদী শুরু। এক সময় সেখানে ট্রলার ভিড়ানো হত। খননের অভাবে ধীরে ধীরে পানির প্রবাহ দূরে সরে গেছে। তবে জোয়ারের সময় সেখানে পানি চলাচল হয়। বর্তমানে জমিটি সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের অন্তভুর্ক্ত। কয়েক বছর ধরে কিছু লোক প্রায় পাচঁ একরের মতো জমি অবৈধভাবে দখলে নেয়। দুইবছর আগেও সেখানে প্যারাবনের বড় বড় দুই শতাধিক বাইন গাছ ছিল। দখলদারেরা সেগুলো গোপনে কেটে ফেলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েক দফা অভিযানও চালিয়েছিল। ভুমি অফিস থেকেও বাঁধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব তোয়াক্কা করেনি দখলদারেরা।

সূত্রটি আরো জানায়, চারপাশে টিনের ঘেরা দিয়ে জমিটি দখল করে। পরে টিনের ঘেরার ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করে। এরমধ্যে একটি স্থায়ী বাড়িও নির্মাণ করেছে জনৈক আবু হান্নান নামে এক ব্যক্তি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানির প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে জায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে। চারপাশের টিনের ঘেরার ভেতরে অত্যাধুনিক বাড়িও তৈরী করা হচ্ছে।
নু—এমং মারমা মং জানান, অভিযান চালিয়ে একটি টিনের তৈরী বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এক পাশের টিনের ঘেরা গুলো সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে কাঠের তৈরী স্থায়ী বাড়িটির তাদের কাজপত্র দেখাতে বলা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই স্থাপনায় অতীতে নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিবে মর্মে দুইবার লিখিত স্ট্যাম্প দিয়েছিলো বলে জানা গেছে।