বিবিসি বাংলা:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং সরকার-ঘোষিত মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকে ঘিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের দুই মেরু, ডান এবং বাম উভয় দিক থেকে আপত্তি জানানো হচ্ছে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বলছে, ভারতের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের দায় ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর ওপরে পরে, এবং সেজন্য তারা তাঁকে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী বা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই দেশে স্বাগত জানাবেন না।

একই সাথে, বাংলাদেশের বেশ কিছু বামপন্থী সংগঠন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে জোর আপত্তি জানিয়ে বলছে, ‘শুধু একটা রাজনৈতিক দলকে খুশি করার’ জন্য নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর তাদের কাছে কাম্য না।

তবে বাংলাদেশ সরকার এইসব প্রতিবাদকে মি. মোদীর সফরের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছে না। ঢাকায় একজন মন্ত্রী বলেছেন, মি. মোদীর সফরের সময় কোন রকম বিক্ষোভ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘জনগণকে সাথে নিয়ে মোকাবেলা করবে’।

‘মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত’

হেফাজতে ইসলামের নেতা আব্দুর রব ইউসুফি বলেন, ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীকে বার বার দেখা গেছে মুসলমানদের নির্যাতন করতে।

“ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী- সে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, ব্যক্তি মোদী হিসেবে তাঁর হাত বার বার ভারতের মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এখন ক্ষমতায় আসার পর একই অবস্থা চলছে।

”এমন অবস্থায় আমাদের দেশে ৯০ শতাংশ সেখানে আমরা মুসলমান হিসেবে তাকে স্বাগত জানাতে পারি না” বলেন মি. ইউসুফি।

ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো এর আগে ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে মানুষ পিটিয়ে মারা, এনআরসি, গুজরাটের দাঙ্গা এসব ইস্যু নিয়ে নরেন্দ্র মোদী বিরোধী মনোভাব দেখিয়ে আসছে।

বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো বাংলাদেশে বড় ধরণের বিক্ষোভ করেছে এর আগে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এই নেতা বলছেন তাদের দাবি উপেক্ষা করে যদি সরকার নরেন্দ্র মোদী সফর বাতিল না করে তাহলে পরবর্তীতে সংগঠনটি তাদের পরিকল্পনা জানাবে।

বিক্ষোভকারীরা দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাতে ঢাকায় আসতে না পারেন।

বিক্ষোভকারীরা দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাতে ঢাকায় আসতে না পারেন।

এদিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু বাম সংগঠন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে জোর আপত্তি জানাচ্ছে।

দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের দুর্বল দিকগুলোকে ইঙ্গিত করে তারা বলছে সীমান্তে হত্যা, তিস্তা এবং ফেনী নদীর পানি বণ্টনসহ নানা ইস্যুতে ভারত বন্ধু-সুলভ আচরণ করেনি।

‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতে আমরা নি:স্ব’

বাংলাদেশ নারী অধিকার পরিষদের একজন নেত্রী ফাতেমা তাসনিম বলছেন, শুধু একটা রাজনৈতিক দলকে খুশি করার জন্য নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর তাদের কাছে কাম্য না।

“মোদী আসবে ভালো কথা কিন্তু আমাদের জনগণের যে দাবি সেই দাবি তাদের মানতে হবে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের একটা আত্মিক সম্পর্ক, সেটা ভৌগলিকভাবে হোক বা মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন -সেটার জন্য অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ সেটা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই”।

“কিন্তু ৫০ বছর ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতে আজ আমরা নি:স্ব হয়ে গেছি। আমাদের কাছে আর কৃতজ্ঞতা নেই” বলেন ফাতেমা তাসনিম।

নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন “আপনি শুধু বাংলাদেশের হয়ে কাজ করেন, আপনি শুধু একটা দলের জন্য কাজ করবেন না। আপনি যদি ভেবে থাকেন একটা দলকে খুশি করে বাংলাদেশে আসবেন আর আপনাকে আমরা ওয়েলকাম জানাবো, সেটা হবে না”।

২০১৫ সালে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল ব্যাপক

২০১৫ সালে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল ব্যাপক

বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করে যেসব সংগঠন প্রতিবাদ করছে তারা বলছে মি. মোদীর সফরের কর্মসূচী নিশ্চিত হলে তারাও তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করবে।

‘ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি’

বাংলাদেশে একাংশের মধ্যে যে নরেন্দ্র মোদী বিরোধী এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতজানু নীতির কথা বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কী বলছে ?

সরকারের একজন মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, কিছু দল রয়েছে যারা ধর্ম কে ব্যবহার করে ভারত বিরোধী মনোভাব পোষণ করেন।

“কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে। তারা সব সময় ভারত বিরোধী এবং ভারত বিরোধিতা করায় তাদের মুল পুঁজি। আমার মনে হয় না এটা নিয়ে খুব একটা অসুবিধা হবে। এবং ভারত সরকারও এ ব্যাপারে সচেতন”।

মি. রাজ্জাকের কাছে জানতে চাওয়া হয় যদি মি. মোদীর সফরের দিন বা আগে কোন বিক্ষোভ, মিছিল হয় সেটা কতটা অস্বস্তিকর হবে। তিনি বলেন ” আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, জনগণ আছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছে, সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা এগুলা মোকাবেলা করবো”।

এদিকে ‘৭১’র ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ নামে বাংলাদেশের একটা নাগরিক সংগঠন আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যদি নরেন্দ্র মোদী বিরোধী কোন বিক্ষোভ আগামী ১৭ই মার্চে হওয়ার পরিকল্পনা করা হয় তাহলে সেটা তারা প্রতিহত করবে।