বলরাম দাশ অনুপম :
সারাদেশের মত কক্সবাজারে ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গেল ১ সপ্তাহের ব্যবধানে সনাক্তের হার সাড়ে প্রায় ৫ শতাংশের উপরে। করোনা বৃদ্ধির এমন পরিস্তিতিতে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে করোনা বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণ করতে জরুরী সভার আযোজন করা হয়।‘ কোভিট-১৯ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভা’য় স্বাস্থ্য বিভাগ, সংশ্লিস্ট প্রশাসন,রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ করোনা বৃদ্ধির কক্সবাজারবাসীর জন্য সর্তকতা এবং করনীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় কক্সবাজারের করোনা পরিস্থিতি এবং করনীয় বিষয়ে ডিজিট্যাল কন্টেটের মাধ্যমে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সৌনম বড়ুয়া।

তিনি জানান, কক্সবাজারে গতকাল ১৫ মার্চ পর্যন্ত করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৭ হাজার। সেখানে আক্রান্তের হার ৬.৬৪ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯২.০৬ শতাংশ। মোট কভিট রোগি ৬১১১ জন এবং এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮২ জন এরমধ্যে স্থানীয় ৭৩ জন এবং বাকিরা রোহিঙ্গা।এখনো ৭ শতাংশ করোনা রোগি সুস্থ হয়নি বলে তিনি জানান।
এদিকে গত ১ সপ্তাহে সারাদেশের মত কক্সবাজারে ও করোনা আক্তান্ত রোগির সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি জানান। কয়েকদিনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন গত ফেব্রয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত গড়ে ৩০০ এর অধিক পরীক্ষা করা হয়েছে এরমধ্যে ১০ মার্চে ৪৫৭ জনে ৯ জন, ১২ মার্চে ৩৪৩ জনে ১০ জন, ১৩ মার্চে ৩৩৭ জনে ১৪ জন, ১৪ মার্চে ৩৯৫ জনে ১৬ জন এবং ১৫ মার্চে ৩৭২ জনে ১১ জন করোনা সনাক্ত রোগি পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা সারা দেশের মত কক্সবাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা খুবই কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে ও সচেতন করে দেন সকলের।

করোনার ঠিকাদান বিষয়ে ডাঃ সৌনম পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন তা হলো কক্সবাজারে করোনার টিকা এসেছে ৮৭ হাজার ২২৮ টি , প্রয়োগ করা হয়েছে ৬৭ হাজার৭৫৭ জনের শরীরে। ৯ কেন্দ্রে ২৬টি বুথে এ টিকা কার্যক্রম চলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেনে।
চলমান করোনা রোগি বৃদ্ধির কারন উল্লেখ করে তিনি বলন- কক্সবাজার পর্যটন নগরী, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, জনসাগম বৃদ্ধি, টিকা গ্রহনের পর করোনা আর হবেনা এমন মন মানসিকতায় দায়ি ।

করেনার প্রকোপ বৃদ্ধি এবং করোনার হাত থেকে জেলাবাসিকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসন এবং পৌরসভার সহায়তায় ডজন খানেক পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ। জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ সমুহ হলো মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণ, মসজিদে, প্যাগেডা সহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতার বিষয়ে প্রচার, পর্যটন এলাকায় নিয়মিত অভিযান, হোটেল মোটেল জোনে মা¯ক পরিধান ও স্যানিটাইজেশন নিশ্চিতকরনে মালিকদের সাথে সচেতনতামুলক সমাবেশ, হাসপাতাল সমুহকে প্রস্তুত রাখা, সরকারি লজিষ্টিক সাপোর্ট প্রস্তুত রাখা, পর্যটকদের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ টিম গঠন, সরকারি হাসপাতালের সাথে প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সমন্বয়, হোস্ট কমিউিনিটিকে সজাগ করতে স্থানীয় মিডিয়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে কার্যকর করতে দ্রুত কমিটি গঠনসহ নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়।
কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান গতবছর পৌরসভার কন্ট্রাক ট্রেসিং টিমকে সরকারিভাবে সম্মাননা অনুরোধ জানান। তিনি বলেন গত বছর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ নজিবুল ইসলামের নেতৃত্বে জীবনের ঝুকি নিয়ে যে কার্যক্রম চালিয়েছে তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয় কিন্তু করোনার এ যোদ্ধাদের সরকারিভাবে কোন সম্মাননা দেয়া হয়নি। তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আর্কষন করেন।কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধক্ষ্য অধ্যাপক ড. অনুপম বড়ুয়া মাক্স পরা বাধ্যতামূলেক করন ও কন্ট্রাকট্রেসিং জোরদার করার উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরী বলে জানান ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ সেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শাহজাহান নাজির ও ডা.আরিফ হোসেন চলমান করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সকলের সামাজিত দুরত্ব বজায়, মাস্ক পরিধান, সমাগম এড়ানো, করোনার দৈনন্দিন আক্রান্তের হার বৃদ্ধিকে মাথায় রেখে সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এতে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক মিসেস শ্রাবস্তি রায়, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নজিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবুর রহমান, ডাঃ মহিউদ্দিন আলমগীর, জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের চিকিৎসক, রাজনৈতিক প্রতিনিধি এবং স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।