সিবিএন ডেস্ক:
দাড়ি থাকার কারণে জনপ্রিয় রিটেইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ে চাকরি পাননি বলে এক যুবক অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সেই বক্তব্য কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়ার পরে অনেকে আড়ংয়ের পণ্য বর্জনের ডাক দেন। এ অবস্থায় দুঃখ প্রকাশ করে আড়ং আজ সোমবার বিবৃতি দিয়েছে। তারা এটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিঃসন্দেহে তাদের মূল্যবোধের পরিপন্থি’ বলে উল্লেখ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় আট মিনিটের একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক যুবক, নিজেকে ইমরান হোসেন ইমন পরিচয় দিয়ে বলছেন, “আমি ইমরান হোসেন ইমন গাজীপুর থেকে এসেছি। এখন আছি তেজগাঁও আড়ংয়ের মেইন ব্রাঞ্চের অপজিটে আমি দাঁড়ানো। গত এক সপ্তাহ আগে একটি সিভি ড্রপ করেছিলাম। আপনারা জানেন, সামনে রমজান আসছে। তো শোরুমগুলোতে সেলসম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই পারপাস থেকে এখানে সিভি দেওয়া, যাতে বসে না থেকে পরিবারের সাপোর্ট দিতে পারি। উত্তরায় অবস্থিত অনেকগুলো শোরুমে সিভি ড্রপ করেছিলাম। কিন্তু কোথাও থেকে কল আসেনি, আড়ং থেকে কল এসেছিল। এবং আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল। তো আজ শুক্রবার আমি গাজীপুর থেকে এখানে আসি। তো ইন্টারভিউয়ের রুমে যাওয়ার পর তারা আমাকে কিছু প্রশ্ন করলেন। সে সময় তারা এমনভাবে কথা বলেছেন, যে তারা আমাকে নিয়ে নিয়েছেন। সেখানে সবাই মাস্ক পরেছিল। তো একটা সময় আমাকেও মাস্ক খুলতে বললেন। তারপর তারা আমাকে বললেন, ‘সরি আমরা আপনাকে কনফার্ম করতে পারছি না।’ তো আমি জানতে চাইলাম, কেন ভাইয়া? তাঁরা তখন বললেন, ‘করতে পারছি না, ওই রকম বলব না। আপনি যদি শেভ করতে পারেন, তাহলে আমরা আপনাকে কনফার্ম করতে পারব ইনশা আল্লাহ। এ ছাড়া আপনার সবই ঠিক আছে।’ তো উনারা শেভ বলাতে আমি বুঝতে পারিনি বলে আরেকবার জানতে চাইলাম। তখন তাঁরা আমাকে বললেন, ‘আমাদের আড়ংয়ের রুলস হচ্ছে, সেলসম্যানের জব করতে হলে, আপনাকে মাস্ট ক্লিন শেভ করতে হবে।’ তো এটা শুনে আমি জাস্ট এক মিনিটের জন্য হতভম্ব হলাম। একজন নারীর জন্য নেকাব খোলা বা বোরকা খুলতে বলা যেমন ভয়ংকর একটি ব্যাপার, এটাও তেমন একটি ব্যাপার। এরপর আমি তাদের বললাম, ভাইয়া, আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া যে, আমাকে মুসলিম বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এরপর আমি বললাম যে, আমি আপনাদের জবটা করব না ভাইয়া। এরপর আমি উঠে চলে আসতে গেছিলাম। তারপরও আরেকবার বললাম, আমি আসলে নিডি। জবটা আমার দরকার। আমাকে অন্য কোনোভাবে নেওয়া যায় কি না বা কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ আছে কি না। কিন্তু তাঁরা আবার বললেন, ‘আমাদের আড়ংয়ের রুলস হচ্ছে এটা (দাড়ি) কাট করতে হবে।’ তারপর আমি খুশি মনে চলে এসেছি। তাদের বললাম, আমি আসছি তাহলে। এখন আমি বাইরে চলে আসছি।

এখন কথা হচ্ছে গিয়ে, আমি একজন মুসলমান। আমি কথাটা উনাদের বলেছি। একজন মুসলমান হিসেবে এটা রাখা আমার জন্য ফরজ। তারপর হচ্ছে আমি আমার রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসি। ফলে একমুষ্টি বা তার থেকে বড় (দাড়ি) ছেড়ে দিতে হবে আমাকে। মুসলমান হিসেবে তো কখনও দাড়ি কাটা সম্ভব না।

কিছুদিন আগে যখন মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করেছিল। আপনারা আড়ংয়ের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই মনে হয় হ্যাশট্যাগ ইউজ করে ‘বয়কট ফ্রান্স’ বলেছিলেন। ফ্রান্সের পণ্য বয়কট করেছিলেন আপনারা। রাসুলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট করেছিলেন। তাহলে এখন কেন আমাকে এটা (দাড়ি কাটা) করতে হবে? এটা তো রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ এবং ফরজ এটা।

ব্যাপারটা লজ্জাজনক এবং হার্টিং অলসো। একটা মুসলমান কান্ট্রিতে থেকে আমার এজের একটা ছেলে যেখানে জব করে খেতে চাচ্ছে, আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট, ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টে পড়ি। ইউনিভার্সিটির নাম বললাম না। অনেক প্রবলেমও হতে পারে। বাংলাদেশ তো, মুখ খুলে কিছু বলা যায় না। তো পার্টটাইম জব এবং আমাদের যেহেতু বন্ধ আছে, সেহেতু আমি কিছু একটা করতে চাচ্ছি। কিন্তু আমাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, সেটা অন্য কোনো রিজনে হলে আমি মেনে নিতাম। আমার যদি কোয়ালিফিকিশনে কমতি থাকত বা তারা যা দেখেছে তাতে যদি আমার কমতি থাকত তাহলে আমি মেনে নিতাম। কিন্তু তারা বলতেছে সিরিয়াসলি আমার বিয়ার্ড কাট করতে হবে, সিরিয়াসলি, যে শেভ করতে হবে আমাকে। ব্যাপারটা লজ্জাজনক।

আমি বলব আলহামদুল্লিলাহ, যে আমি তাদের সেই জবটা করিনি বা তাদের সঙ্গে আমি কো-অপারেট করিনি। আপনাদের এই ফাইভ থাউজেন্ড অর টোয়েন্টি থাউজেন্ড স্যালারি আমার কাছে কিছু না।

আপনাদের টোয়েন্টি থাউজেন্ডের ভ্যালু আমার একটি বিয়ার্ড ছিড়লেও হবে না। আমাকে যদি আপনারা পার্মানেন্ট জবও দেন, আমি সেটা করব না। আমি জব করব না যদি আমাকে এই বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে হয়,’ বলছিলেন ইমরান হোসেন ইমন।

আড়ংয়ের দুঃখ প্রকাশ

আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি আড়ং-এর একটি ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত একজন চাকরি প্রার্থীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি নিঃসন্দেহে আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী।

আড়ং বয়স, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, অক্ষমতা বা জাতিগত উৎস নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক মর্যাদা এবং অন্তর্ভুক্তির অধিকারগুলো সমুন্নত রাখে। আমাদের নিয়োগের সিদ্ধান্তে ধর্মীয় বিশ্বাস ও পালনকে কখনই বিবেচনা করা হয় না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ৮০০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছে এবং সব ধর্মের কর্মীবৃন্দ শ্রদ্ধার সঙ্গে এবং প্রকাশ্যে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।’

আশরাফুল আলম অঙ্গীকার করেন, ‘আমাদের ভবিষ্যতের ইন্টারভিউ বোর্ডগুলোর পরিচালনায় আমাদের মূল মূল্যবোধগুলোর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করব এবং ইন্টারভিউ বোর্ড সংশ্লিষ্টদের শিষ্টাচারের বিষয়ে সংবেদনশীলতা আনতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

আড়ংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সেই সব চাকরি প্রার্থীরা যাঁরা মনে করেন আমাদের কোনো একটি ইন্টারভিউ বোর্ডে যেকোনো বিষয়ে তাঁরা যথাযথভাবে পরীক্ষিত হননি, তাঁরা আমাদের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগের ইমেইল : johan.ahmed@brac.net।’