সিবিএন ডেস্ক:
চলতি বছর হজ পালনে আগ্রহীদের নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে মার্চ মাস থেকেই। যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে তাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থাপনায়। মে মাসের মধ্যেই সবার দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। সৌদি আরব সরকার হজের তারিখ ঘোষণা করলেই যেন সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যায় সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এমন পরিকল্পনা।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মুহাম্মদ আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘যারা হজে যাবেন তাদের সবাইকেই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এক্ষেত্রে যারা ৪০ বছরের ওপরে আছে তাদের তো স্বাভাবিক নিয়মেই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। আর যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে তাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। আমরা চাচ্ছি মার্চেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দিয়ে, মে মাসে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে কিন্তু হজ পালনে আগ্রহী তাদের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করিয়ে দেবো। তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো। পরে তারা হজে যাওয়া প্রাক নিবন্ধন কাগজ দেখিয়ে যেকোনো কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন নিতে পারবে। যদিও সৌদি আরব এখনও হজ বিষয়ে কিছু বলে নাই। তারা বললে হয়তো বা আমরা কোনো পরিকল্পনা করতে পারতাম। কিন্তু তবুও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’

হজ অ্যাজেন্সিস অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার বলেন, ‘হজে যাওয়া বিষয়ে আসলে দুই একদিনের মধ্যে সব ধরণের সার্কুলার দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন আকারে জানানো হবে। ইতোমধ্যেই আজকে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যেই বা এপ্রিলের প্রথম মাসে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা যাবে।’

হজ অ্যাজেন্সিস অব বাংলাদেশের (হাব) সচিব সুলতান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে হজের যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপরে। বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আবার বাড়ছে। হজ হওয়ার কথা ১৭ জুলাইয়ের আশেপাশে। ওই সময়ে বিশ্বে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যদি ইম্প্রুভ করে তবে হজ হতে পারে। এক্ষেত্রে সৌদি সরকার এলাউ করলে হজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘হজ হওয়ার কিছু লক্ষণ অবশ্য দেখা যাচ্ছে। কারণ এর মধ্যেই যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তাদের ভ্যাকসিন নিতে বলেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে ওমরাহ পালনের জন্য অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশ থেকে এখনো অনুমতি দেওয়া না হলেও ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ওমরাহ করতে দেখা যাচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। যদিও সংখ্যাটা কম। কারণ এখন কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে দেওয়া হয় না। এছাড়াও নামাজ ও এবাদত বন্দেগি করার জন্য একজন থেকে আরেকজনের দূরুত্ব বজায় রাখতে হয়। এসব কিছু মিলিয়ে বলা যেতে পারে যে সংখ্যায় কম হলেও হজ এবার হতে পারে।’

ভ্যাকসিন বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘খুব দ্রুতই যারা হজ পালন করবেন তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণের দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এক্ষেত্রে যারা হজে যাবেন তাদের রেজিস্ট্রেশন করানো হবে। ২০২০ সালে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল ৬৭ হাজার। এর মধ্যে ছয় হাজার মানুষ টাকা তুলে নিয়েছে। বাকি ৬১ হাজারের মধ্যে যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তারা ভ্যাকসিনের জন্য প্রায়োরিটি ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। যারা প্রাক নিবন্ধন করে নাই তাদের জন্য কোনো প্রায়োরিটি দেওয়া না ও হতে পারে। যাদের বয়স ৪০ এর ওপরে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে স্বাভাবিক ভাবেই। যাদের ৪০ এর নিচে আছে তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হজ পালনে আগ্রহীদের কিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে আসে নাই। যদি আসে তবে সে হিসেবে অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে তালিকা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তালিকা দিলে সেই হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ সৌদি আরবের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার হজে যেতে হবে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ারও ১৫ দিন পরে। সেক্ষেত্রে তালিকা দ্রুত দেওয়া হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য হবে।’

এর আগে, সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়াহ গত ১ মার্চ দেশটির গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, চলতি বছর হজ পালনকারীদের জন্য কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সৌদি সরকার। যারা টিকা নেবেন না তারা এ বছর হজে অংশ নিতে পারবেন না।

মন্ত্রীর নির্দেশনা সম্বলিত প্রজ্ঞাপনকে উদ্ধৃত করে সৌদি আরবের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, হজের সময় মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে জনবল সরবরাহরে জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিতেও মন্ত্রী আহ্বান জানান। হজ পালনকারীদের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা দিয়েছেন ডা. আল রাবিয়াহ। -সারাবাংলা