সিবিএন ডেস্ক:
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী ভারতে পৌঁছেছে চার শতাধিক মানুষ। সোমবার ভারতের একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও দমকলকর্মীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। ভারতে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, জান্তা সরকার প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলি চালানোর যে আদেশ দিয়েছে, সেটি মানতে অস্বীকার করায় তারা নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আর এমন আশঙ্কা থেকে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, শুধু গত শুক্রবারই মিয়ানমার থেকে ১১৬ জনের মতো সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। তবে বিষয়টির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশে রাজি হননি।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এসব অনুপ্রবেশ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। তবে পাহাড়ি এলাকায় অনুপ্রবেশ বন্ধে নজরদারি খুব সহজ নয়। এছাড়া প্রত্যন্ত সীমান্তের উভয় পাশে মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবেও সম্পর্ক রয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে অব্যাহত বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। গত ১৪ মার্চ ছিল সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। এদিন দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে সরকারি বাহিনী গুলি চালালে ৫০ জনের মতো নিহত হয় বলে খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে।

সেনাবাহিনী সারা দেশজুড়ে আরও নতুন নতুন এলাকায় কঠোরভাবে সামরিক আইন আরোপ করতে শুরু করেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি কোথায় রয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। তাকে অজ্ঞাত জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজিরের কথা থাকলেও পরে ভার্চুয়াল শুনানি মুলতবি করা হয়।

ইয়াঙ্গুনে চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা:
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী এবং দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে। রবিবার সেখানে চীনা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক আইন জারি করা হয়।

ইয়াঙ্গনের হ্লাইং থারাইয়ার এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে যেগুলো চীনা বিনিয়োগে তৈরি। চীনারা বলছে, তাদের কারখানাগুলো বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, ফলে তাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।

বেইজিং-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা রড, কুঠার এবং পেট্রোল নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে অন্তত ১০টি কারখানার ক্ষতিসাধন করেছে। এগুলো মূলত তৈরি পোশাকের কারখানা কিংবা গুদাম। একটি চীনা হোটেলও হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়।

মিয়ানমারের চীন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পাতায় লিখেছে, কারখানাগুলোতে লুটপাট হয়েছে, ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। বহু চীনা কর্মী আহত হয়েছে এবং অনেকে আটকা পড়েছে।

ওই এলাকায় রবিবার দিনভর গুলির শব্দ শোনা যায়। রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্রাক দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা বালির বস্তা, টায়ার ও কাঁটাতার দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। কিছু বিক্ষোভকারীকে দেখা যায় অস্থায়ী ঢাল তৈরি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আহতদের উদ্ধার করার জন্য। সোমবারও কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর গুলিতে অন্তত দুই জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

ঠাণ্ডা মাথায় গুলি:
বিবিসি-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথন হেড বলছেন, রবিবার সেনাদের ঠাণ্ডা মাথায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘সেনারা যেভাবে মৃতদেহ এবং আহতদের টেনে টেনে সরিয়েছে তাতে স্পষ্ট যে কোনও দয়ামায়া তারা দেখাতে রাজি নয়।’ জনাথন হেড বলেন, সেনাবাহিনী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বাইরের বিশ্বের উদ্বেগ-ক্ষোভ তারা পাত্তাই দিচ্ছে না।

যে সরকারকে সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করেছে তাদের সঙ্গে আপোসের কথা বিবেচনা করার বিন্দুমাত্র লক্ষণও সেনাবাহিনী এখনও দেখাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতেই প্রতিবেশী ভারতে অনুপ্রবেশ করে দেশটিতে আশ্রয় চাইছে মিয়ানমারের কয়েকশ মানুষ। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।