সিবিএন ডেস্ক:
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। তিনি জানান, সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের ফাইলে স্বাক্ষর করেন।

এ বিষয়ে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় নিজ বাসায় চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এরআগেও খালেদা জিয়ার জামিনের শর্তে একই কথা বলা হয়েছিল।

পরে সাজা স্থগিতের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সাজা স্থগিতের অনুমোদন দিয়েছেন। নিজ বাসায় থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা নিতে পারবেন। জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের যেকোনও হাসপাতাল থেকেও সেবা নিয়ে আবার বাসায় চলে আসবেন। তবে এই সময়ে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।’

এরআগে, ৩ মার্চ খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন জানান তার ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার। আবেদনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাতে স্বাক্ষর করে সচিবের দফতরে পাঠান।

সে সময় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার। পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনে দণ্ড মওকুফের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার জামিনের শর্ত শিথিলেরও আবেদন করা হয়েছে।

এরআগে, গত ২৫ মার্চ বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তিনি গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়ি ফিরোজায় বসবাস করছেন।

সে সময় খালেদা জিয়ার জামিনের শর্তের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘শর্ত দুটি হলো—ঢাকায় তার (খালেদা জিয়া) নিজ বাসায় থাকবেন, আর এসময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।’

তখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তিনি রাজনীতি করবেন কেন? তিনি এখন সাজাপ্রাপ্ত দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত। তার ছয় মাসের দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে।’

শর্ত ভঙ্গ করলে তার মুক্তি বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।’

তবে মুক্তির পর খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচিতে অংশ নেননি। পরিবারের সদস্য ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করেননি তিনি।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন গৃহকর্মী ফাতেমা। ওই বছরের ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয় তাকে। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। ফের ফিরিয়ে নেওয়া কারাগারে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করতে ও চিকিৎসাসেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুই দিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর বিকাল পৌনে চারটার দিকে বিএসএমএমইউতে আনা হয় তাকে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথমে পাঁচ বছরের এবং পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। এই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।