সিবিএন ডেস্ক:
হাটহাজারীর মারকাযুল ইসলামিক একাডেমিতে শিক্ষকের হাতে মারধরের শিকার আট বছর বয়সী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তায় তার বাসায় সার্বক্ষণিক তিনজন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে প্রশাসেনের পক্ষ থেকে। এছাড়া তার চিকিৎসার পাশাপাশি অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

রবিবার (১৪ মার্চ) মাদরাসা শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনায় শিক্ষক হাফেজ মো. ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপবিষয়ক শুনানিতে আদালতকে এসব তথ্য জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, আদালতের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, দণ্ডবিধি ও শিশু আইনে এই ঘটনায় ১০ মার্চ মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা মো. ইয়াহিয়াকে নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্যাতিত শিশু শিক্ষার্থীকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির বাসায় তিনজন পুলিশ মোতায়েন করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রথমে শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে চাননি বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার (কাউন্সেলিং) পর শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ দায়িত্বশীল যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই মাদ্রাসা বা অন্য কোনো মাদ্রাসায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

হাইকোর্ট বলেছেন, মাদ্রাসায় নির্যাতন, বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকে আদালতের নির্দেশনা আছে। নির্দেশনাগুলো সব জায়গায় যাতে কার্যকর হয়। কমিটি গঠনসহ আদালতের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যাতে সচেষ্ট থাকে। মারধরের শিকার শিশুটির লেখাপড়া ভয়ভীতির কারণে বন্ধ হয়ে না যায়, এটি যেন তারা খেয়াল রাখে।

ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ১১ মার্চ আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ওই ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপ রোববারের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে মৌখিক আদেশ দেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপসংক্রান্ত তথ্য জানাতে বলা হয়। তার ধারাবাহিকতায় রবিবার রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার পদক্ষেপসংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

শুনানিকালে আদালত বলেন, মাদ্রাসা কি এখন খোলা? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খোলা আছে। আদালত বলেন, এখন স্কুল-কলেজে ক্লাস হয় না, ওখানে (মাদ্রাসা) ক্লাস হয় কি?

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, কওমি মাদ্রাসা আবাসিক। আদালত বলেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী চলে। যেহেতু মামলা হয়ে গেছে, আইন অনুসারে মামলা চলবে।

মাওলানা ইয়াহিয়া হাটহাজারী সদরের মারকাযুল ইসলামিক একাডেমি নামের হাফেজি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় তাঁর গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সূত্র জানায়, হেফজ বিভাগের শিশুটির জন্মদিন উপলক্ষে তাকে দেখতে ৯ মার্চ বিকেলে মা-বাবা মাদ্রাসায় আসেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পরপরই শিশুটি মাদ্রাসা থেকে বাইরে বের হয়। তখন শিশুটিকে ধরে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে মারধর করেন শিক্ষক ইয়াহিয়া। ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক ইয়াহিয়া শিশুটিকে ঘাড় ধরে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে যান। পরে তিনি শিশুটিকে বেধড়ক মারধর করেন। ওই ভিডিটি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। -সিভয়েস।