সিবিএন ডেস্ক:
মিয়ানমারে সামরিক সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে আরও অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে। শনিবার অভ্যুত্থানের পর প্রথম প্রকাশ্য ভাষণে অভ্যুত্থান প্রতিহত করতে ‘বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছেন স্বঘোষিত বেসামরিক সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে মধ্যাঞ্চলীয় শহর পিয়ায়তে। বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে দুই জন। এর আগের রাতে সেখানে আরও তিনজন নিহত হয়।

মান্দালয়ভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট মিয়াত থু নিহতদের মধ্যে ১৩ বছরের শিশুও রয়েছে। তিনি বলেন, তারা এমন আচরণ করছে যেন তারা নিরস্ত্র মানুষের সঙ্গে যুদ্ধে মেতেছে।

আরেক বিক্ষোভকারী দাবি করেছেন, এক বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ দুজনকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছেন তিনি। বলেন, একজনের উরুতে গুলি লেগেছে, আরেকজনের নৃশংস মৃত্যু হয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পিয়ায় শহরে নিরাপত্তাবাহিনী প্রথমে একটি অ্যাম্বুলেন্সকে আহতদের নিতে দেয়নি। এতে করে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মধ্যাঞ্চলীয় মাগওয়ে অঞ্চলের চৌক শহরে এক ট্রাক চালক বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার এক পারিবারিক বন্ধু।

বিক্ষোভ দমনে সহিংসতার বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্য জানতে মিয়ানমার জান্তার এক মুখপাত্রকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারজুড়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে ৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

শনিবারের বিক্ষোভে এই সহিংসতার ঘটনা এমন সময় ঘটলো যখন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের নেতারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। এছাড়া একই দিনে উৎখাত হওয়া ও স্বঘোষিত বেসামরিক সরকারের কোনও নেতা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বক্তব্য দিলেন।

সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হওয়া অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আত্মগোপনে থাকা সবচেয়ে সিনিয়র নেতা মান উইন খাইং থান ফেসবুকে দেশটির জনগণের প্রতি বক্তব্য রেখেছেন। এতে তিনি বলেছেন, এটি আমাদের আমাদের জাতির সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্ত এবং এই সময়ের অবসান হতে আর বেশি দেরি নাই।

মিয়ানমারের উৎখাত হওয়া আইনপ্রণেতারা তাকে ভারপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। স্বঘোষিত এই সরকার নিজেদের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কাজ করছে। তারা কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন।

স্বঘোষিত বেসামরিক সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কয়েক দশক ধরে আমাদের স্বৈরাচারের বিভিন্ন নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই বিপ্লব আমাদের সব শক্তি ও সামর্থ্যকে ঐক্যবদ্ধ করার সুবর্ণ সুযোগ।

তিনি জানান, নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বঘোষিত সরকার আইন তৈরির চেষ্টা করছে এবং জন প্রশাসন পরিচারিত হবে অন্তর্বর্তী জন প্রশাসন টিম দ্বারা।

অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের মতো সরকারি কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। অসহযোগ আন্দোলন পরে সাধারণ ধর্মঘটে রূপ নিয়েছে। এতে দেশটির অর্থনীতির বিভিন্ন খাত অচল হয়ে পড়েছে। সামরিক সরকারের হাত থেকে ফসকে গেছে সরকারি কাজ করার বিরাট কর্মীবাহিনী।

শনিবার বিক্ষোভের শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফোন মাও নামের বিক্ষোভকারীর নিহত হওয়ার বার্ষিকী উদযাপনের ডাক থেকে। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সামরিক সরকারের হাতে রেঙ্গুন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাবাহিনী তাকে হত্যা করেছিল। এ ঘটনার কয়েক দিন আরেক ছাত্রের মৃত্যু হলে দেশটিতে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ৮-৮-৮৮ আন্দোলন গতি পায়। কারণ ১৯৮৮ সালের আগস্টে আন্দোলন চূড়ায় পৌঁছায়। এই বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী প্রায় ৩ হাজার মানুষকে হত্যা করে।

ওই আন্দোলনের সময় গণতন্ত্রের প্রতীক রূপে আবর্তিত হন অং সান সু চি। প্রায় দুই দশক তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ২০১০ সালে সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু করলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তার দল এনএলডি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সর্বশেষ ২০২০ সালে নভেম্বরের নির্বাচনেও তার দল জয়ী হয়।

১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সু চি ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের আটক করে এবং নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে।