জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানোর জন্য একটি ভবনের চারতলা থেকে লাফ দিয়ে বড় সীমানা প্রাচীর টপকে পালিয়েছেন বন্দি ফরহাদ হোসেন রুবেল। জানা যায়, প্রায় ৬০ ফুট উপর থেকে লাফ দিয়েও তার পা ভাঙেনি। খুব অবাক তঁথ্য, এক্স-রে করার পর পুলিশ এ তথ্যটি জেনেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে জেল পালানো ফরহাদ হোসেন রুবেলকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়; তাকে আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পর এই সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ।

অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় আসামি রুবেল গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন। তিনি কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ তলার একটি ফ্লোরে থাকতেন। গত ৬ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে ওই ভবন থেকে নিচে নামেন রুবেল।

‘সেখানে একটা পানির হাউস থেকে তিনি চোখে মুখে পানি দেন। এরপর ডান পাশের গেট দিয়ে বেরিয়ে ওই ভবন থেকে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ গজ দূরে একটি নিমার্ণাধীন ভবনের চারতলায় উঠেন রুবেল। ৫টা ৩০ মিনিটের সময় চারতলা থেকে লাফ দিয়ে কারাগারের নিরাপত্তা প্রাচীর টপকে লাফিয়ে পড়েন তিনি। এরপর শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে প্রথমে ঢাকা ও পরে হয়ে নরসিংদীতে ফুফুর বাড়িতে যায় রুবেল।’

পলাশ কান্তি নাথ বলেন, অন্যদিকে রুবেলের উধাও হওয়ার ব্যাপারটি জানার পর কমিশনার স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা পাঁচটি টিম গঠন করি। এরপর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে আজ সকাল ৯টার দিকে রুবেলকে নরসিংদী থানাধীন রায়পুরার তার ফুফুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।

‘এখন রুবেল কিছুটা অসুস্থ আছে। তাকে আমরা আদালতে হাজির করবো। সে এখন কথা বলার পর্যায়ে আসেনি। সুস্থ হওয়া সাপেক্ষে তাকে রিমান্ডে এনে এই মামলার রহস্য উদঘাটন করবো।’

তিনি বলেন, ‘চারতলা থেকে লাফ দেয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। কিন্তু এখানে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যাপারটি সত্যি। ভাঙা পা নিয়ে কিভাবে তিনি নরসিংদী গেলেন সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজনে এখন কিছু বিষয় আমরা গোপন রাখছি। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।’

পুলিশ কর্মকর্তা পলাশ বলেন, ‘এক্সরে করে দেখেছি, রুবেলের পা ভাঙেনি। সে আগেও এরকম দুর্ধর্ষ কিছু কাজ করতো, অভ্যাসগত ছিনতাইকারী। তার আগে থেকে চারটি মামলা ছিল। শারীরিকভাবে রুবেল খুবই সক্ষম। তার মানসিক শক্তিও বেশি। শারীরিক সক্ষমতার কারণে তাকে অন্যরা ভয় পায়, তার হাতে সবসময় চাকু থাকে।’

এর আগে গত শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা ফরহাদ হোসেন রুবেল নিখোঁজ হন। এ ঘটনা জানিয়ে শনিবার সকালে নগরীর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর রাতে মামলা করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।

সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় আসামি রুবেল গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তিনি সদরঘাট থানার এসআরবি রেল গেইট এলাকায় ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে বুকে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কালাম হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় কালামের মা মর্জিনা বেগম সদরঘাট থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রুবেল কারাগারে ছিলেন।

এদিকে রুবেলের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তদন্তে কারা অধিদপ্তরের গঠিত কমিটিতে কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. ছগীর মিয়ার সঙ্গে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার ইকবাল হোসেন এবং বান্দরবান জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার ফোরকান ওয়াহিদ।

এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

পরে কারাগারের যেসব সিসি ক্যামেরা রয়েছে, তার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি। এক পর্যায়ে গতকাল সোমবার রাতে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন, রুবেল ছাদ থেকে লাফ দিয়ে দেয়াল পার হয়ে পালিয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে প্রত্যাহার এবং দুই কারারক্ষীকে বরখাস্ত করা হয়েছে; পাশাপাশি একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।