বার্তা পরিবেশক :

জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় এর জীবিকাভিত্তিক কার্যক্রমের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক নারীকে সহায়তা দিচ্ছে।

২০১২ সাল থেকে ডব্লিউএফপি’র এনহ্যান্সিং ফুড সিকিউরিটি এন্ড নিউট্রিশন (ইএফএসএন) নামক জীবিকা-বিষয়ক কার্যক্রমের আওতায় পুরো কক্সবাজার জেলায় নারীদের উদ্যোক্তা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও আর্থিক স্বাক্ষরতা প্রদানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়তা করা হচ্ছে। এই মাসে প্রথমবারের মতো জেলার সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা – মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় এই কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও ১৫ হাজার অতিরিক্ত নারীকে কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ইতোমধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ডব্লিউএফপি ৩০ হাজার নারীকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

কক্সবাজারে ডব্লিউএফপি’র সিনিয়র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, “গত বছর করোনাভাইরাস মহামারী ঝুঁকির মুখে থাকা অনেক পরিবারকে ক্ষুধার মুখে ঠেলে দিয়েছিল। আর এই সময়টাতে নারীরা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির মুখে পড়েছিলেন, কারণ বাসার বাড়তি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁদেরকে খাবার যোগাড় করতে হচ্ছিল।” তিনি আরও বলেন, “ডব্লিউএফপি’র জীবিকা-বিষয়ক কর্মকাণ্ডের পরিসর বাড়ানো হয়েছে যেন এই কঠিন সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা নারীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা যায় ও ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ মোকাবেলায় তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়।”

ডব্লিউএফপি’র তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার মাতৃপ্রধান পরিবারগুলো গত বছর অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে ছিল। এই সময়টায় পিতৃপ্রধান পরিবারগুলোর তুলনায় মাতৃপ্রধান পরিবারগুলোর আয় ছিল গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ডব্লিউএফপি’র হিসাবমতে, বিশ্বব্যাপী নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষুধার মুখে থাকে। তারপরেও, নারীরা তাঁদের সম্পদের ৯০ শতাংশ তাঁদের পরিবার ও জনগোষ্ঠীতে পুনর্বিনিয়োগ করেন, যার মাধ্যমে তাঁরা ক্ষুধামুক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর অবদান রাখেন।

এই মহামারীতে সাড়া দানের অংশ হিসেবে, দুই বছরের কর্মসূচিতে ডব্লিউএফপি কার্যকরভাবে দ্বিগুণ সংখ্যক নারীকে অন্তর্ভূক্ত করেছে। কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী নারীরা প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের ব্যবসার পরিকল্পনা জমা দেন ও এরপর তাঁদেরকে ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত অনুদান দেওয়া হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২০ সালে ৮১৬টির বেশি দলগত ব্যবসা শুরু হয়েছে ও সেল্ফ-হেল্প গ্রুপে অংশগ্রহণকারীদের যৌথ ব্যাংক একাউন্টে উপার্জিত ৮ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে।

গ্রুডেম আরও বলেন, “নারীদেরকে উপার্জনের সুযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখলে তার ফলে শুধুমাত্র ক্ষুধামুক্তিই ঘটে না, পাশাপাশি তাঁদের পরিবার ও জনগোষ্ঠীও উপকৃত হয়।”

এ ছাড়াও, এই কার্যক্রমের আওতায় কৃষিভিত্তিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত নারীদেরকে বাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প – যেখানে ডব্লিউএফপি’র পক্ষ থেকে ৮ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, সেখানে তাদের উৎপাদিত ফসল ও গবাদি পশু বিক্রি করতে সহায়তা করা হয়। এখন পর্যন্ত, ডব্লিউএফপি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১৮,৮৪৯ নারীকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খাবারের বাজারগুলোর সাথে যুক্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ডব্লিউএফপি’র ফ্রেশ ফুড কর্নার। এই ফ্রেশ ফুড কর্নারগুলো থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাজা ফল ও শাকসবজি সরবরাহ করা হয়। অধিকন্তু, এই কর্মসূচির আওতায় মোবাইল ফোন-ভিত্তিক টাকা স্থানান্তর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর মাধ্যমে মাসিক নগদ ভাতা বিতরণ করা শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে এই দেশের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণকারীদের আরও ভালোভাবে অন্তর্ভূক্ত করা যায়।