মো.ফারুক, পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা শাখার আওতাধীন টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ এপ্রিল। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন ও পুরাতন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউপি সদস্যরা যার যার মত করে তৎবীর শুরু করেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে ভোট না করার সিদ্ধান্ত নিলেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। এছাড়াও নৌকার নমিনেশন পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জেলা আ’লীগ বরাবর সাক্ষতকার দিলেও ইউপির সদস্য দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা আ’লীগ নেতাদের বরাবর ধারস্ত হচ্ছেন।

বিগত ৫ বছর এলাকায় ইউপি সদস্যরা সাধারণ জনগণকে কেমন সেবা দিয়েছেন এমন তথ্য নিতে সাধারণ জনগণের সাথে এ প্রতিনিধি কথা বলেছেন। সাধারণ জনগণ আক্ষেপ নিয়ে বলছেন ইউপি সদস্যরা কাংখিত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। হয়রানির শিকার হতে হয়েছেন বিচার প্রার্থীদের। আর্থিক লেনদেন ছাড়া কোন কাজই করেনি তারা। এমনকি বেশ কয়েকজন বিচার প্রার্থী ইউপি সদস্যের হাতে মারধর ও লাঞ্চিতের মত ঘটনার শিকার হয়েছেন।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে ১নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম, ২নং ওয়ার্ড থেকে বর্তমান ওয়ার্ড আ’লীগের টিপু সোলতান, ৩নং ওয়ার্ড থেকে সাবেক বিএনপি নেতা বর্তমানে আ’লীগের নেতা মনজুর আলম, ৪নং ওয়ার্ড থেকে আ’লীগের সমর্থক নবী হোছাইন, ৫নং ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আবু ওমর, ৬নং ওয়ার্ড থেকে যুবদল নেতা শাহাদাত হোছাইন, ৭নং ওয়ার্ড থেকে আ’লীগ নেতা শাহাব উদ্দিন, ৮নং ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি আবুল কাশেম ও ৯নং ওয়ার্ড থেকে আ’লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে ১,২ও ৩নং ওয়ার্ড থেকে স্বতন্ত্রভাবে ছেমন আরা ৩, ৪ ও ৫ থেকে মহিলা দলের নেত্রী রোজিনা আক্তার এবং ৭,৮ ও ৯ থেকে আ’লীগ নেত্রী হামিদা বেগম নির্বাচিত হয়।

এলাকায় কেমন করেছেন অবকাঠামো উন্নয়ন আর জনগণকে কেমন দিয়েছে সেবা সেই নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বিএনপি থেকে নির্বাচিত। তার ওয়ার্ডে গ্রামীণ অবকাঠামোর লাজুক অবস্থা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিচারে পক্ষপাতিত্ব ও সাধারণ জনগণকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় মোসলেম উদ্দিন বলেন, গত কিছুদিন আগের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম আমাকে কোন কারণ ছাড়াই প্রকাশ্যে মারধর করে আহত করেছে। মোঃ হোসেন ও মালঘারার রফিক বলেন, ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ওয়ার্ডের উন্নয়নের চেয়ে নিজের উন্নয়নের দিকে বেশি নজর দিয়েছেন। যার কারণে ওয়ার্ডে গ্রামীণ অবকাঠামোর লাজুক অবস্থা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। এবারে সাধারণ জনগণ পরিবর্তনের আশা নিয়ে সৎ ও স্বচ্ছ প্রার্থীকে ভোট দিবে। ইতোমধ্যে এ ওয়ার্ড থেকে সাবেক ইউপি সদস্য আবদু জলিল ও যুবলীগ নেতা ব্যবসায়ী ওসমান গণি ভোট করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য টিপু সোলতান আ’লীগ থেকে নির্বাচিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নে যতেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে বেশ বিচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনজুর আলম এক সময়ের বিএনপি প্রভাবশালী নেতা। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর হাত ধরে আ’লীগের কর্মকান্ডে যুক্ত হয়। এরপর শুরু করেন অবৈধ বালি উত্তোলন ও পাহাড় কর্তন। অল্প সময়ে হয়ে যান লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক।

৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবী হোসেন আ’লীগের সমর্থক হলেও মাদক বিক্রি থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাভরণও করেন।

৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু ওমর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও ফরায়েজি হত্যা মামলার আসামী হয়ে এলাকায় অবস্থান করতে পারেনি। বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম মামলাটি তাকে প্রতিহিংসাবসত দিয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আমার ওয়ার্ডে উন্নয়ন কর্মের জন্য অগ্রাধিকার দেয়নি। যার কারণে অবকাঠামো লাজুক অবস্থায় রয়েছে।

৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাদাত হোছাইন যুবদলের নেতা হলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে বেশ কয়েকটি মামলার আসামী হয়। একদিনের জন্য ইউপির কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান করতে না পারলেও এলাকার সাধারণ জনগণকে বিচারকার্যে যতেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তার মরহুম পিতা জাকের আহমদ দীর্ঘদিন টৈটংয়ের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় পুরো ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এ ইউপি সদস্যকে চেয়ারম্যান দাঁড়াতে জোর দাবী জানাচ্ছেন।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন আ’লীগের রাজনীতি করার পাশাপাশি ভ্রদ্র লোক হিসাবে পরিচিত। তবে অবকাঠামো উন্নয়নে ওয়ার্ডে তেমন গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ত্রাণের চাল চুরির কান্ডে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী স্থায়ী বহিস্কার হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বিশৃঙ্খল কার্যালয়ে পরিনত হয়। এমনকি ইউপি কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি। এ ওয়ার্ড থেকে তিনি একে একে দুইবার ইউপি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলেও ওয়ার্ডের অবকাঠামোর অবস্থা চরমভাবে লাজুক। তার বিরুদ্ধে থানায় দালালির অভিযোগ থাকলেও সাধারণ জনগণ তাকে সবসময় পায় বলে জনপ্রিয় তিনি। তিনি দাবী করেন, বিএনপি করার কারণে চেয়ারম্যান তাকে অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা করেনি।

৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে বিচার বাণিজ্যের অভিযোগ থাকলেও তিনি দাবী করেন গত ৫ বছরে দুইটি ড্রেন, ১৬ সেইন ফ্লাট সলিং, ১টি কালভার্ট ও কর্মসূচি প্রকল্প দিয়ে ধনিয়াকাটা ষ্টেশন সড়কের কাজ করেছেন। তবে স্থানীয়রা দাবী করেছেন দৃশ্যমান কোন অবকাঠামো উন্নয়ন এ ওয়ার্ডে হয়নি।

তাছাড়াও তিন মহিলা ইউপি সদস্যর মধ্যে রোজিনা আক্তার রাজনৈতিক মামলায় কারাবরণ করার অভিযোগ থাকলেও অন্য দুই সদস্য হামিদা বেগম ও ছেমন আরার বিরুদ্ধে বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও মাতৃত্বকালিন ভাতা পাওয়া অসহায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন ওয়ার্ডের স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য ইউপি সদস্যদের নির্বাচিত করেছিলেন তারা। কিন্তু টাকা ছাড়া কোন বিচারে তাদেরকে নেয়া যায়নি। সামনের নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তারা।