তারেকুর রহমান:
শহরের শহীদ দৌলত ময়দানে ৭দিনের বইমেলার ৪র্থ দিনেও ভাটা পড়েছে ক্রেতা সমাগমে। বই কিনতে নয় বরং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাবাজি ও সেল্ফি তোলে ঘুরে যেতে বইমেলায় আসে দর্শনার্থীরা। অনেকেই জানে না কক্সবাজারে বইয়ের মেলা হচ্ছে। ঘুম-ঘুম ভাব নিয়ে বিক্রেতাদের অলসতায় কাটছে দিন।
বুধবার (০৩ মার্চ) বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরী (শহীদ দৌলত ময়দান) বইমেলায় সরেজমিনে দেখা যায় ফাঁকা ময়দান। হাতেগোনা কয়েকজন দর্শনার্থী এবং স্টলের কর্মচারী ছাড়া তেমন কারও উপস্থিতি দেখা যায়নি।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, স্টলে স্টলে বেশিরভাগ কর্মচারীই অলস সময় কাটাচ্ছেন। দর্শনার্থীও কমে গেছে। কেন এই অবস্থা, জানতে চাইলে অয়ন প্রকাশন স্টলের বুক সেলার রফিকুল ইসলাম বলেন- প্রচারেই প্রসার। প্রচার-প্রচারণার অভাবের কারণে বইমেলার আজ দুুরবস্থা। তাছাড়া তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে বইয়ের চেয়ে মোবাইলের দিকে মানুষের বেশি আগ্রহ। যার কারণে মুষ্টিমেয় নামেমাত্র ক্রেতা ছাড়া বাকিরা সেল্ফি তোলতে বই মেলায় আসে।
তাঁর স্টলে কোন বইটির চাহিদা বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোয়েব আল হাসান এর ‘এক কাপ অভিমানী চা’ বইটি তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
বিকেল ৩ টায় শুরু হলেও বইমেলায় তেমন ভীড় লক্ষ্য করা যায় নি। করোনার প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমন কম হওয়ার পর কক্সবাজারে প্রথম হঠাৎ অমর একুশে বইমেলা শুরু হলে মানুষের অজানা থাকায় ক্রেতা কম বলে জানালেন আবির প্রকাশন স্টলের সত্বাধিকারী মুহাম্মদ নুরুল আবসার।
তিনি বলেন, ‘বইমেলার এরকম ভরাডুবি এবং বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসার অবনতি আমি আর কখনো দেখিনি। মেলা শুরু হওয়ার ৪দিনেও ক্রেতা সমাগম কম। ভালো ভালো লেখকের বই সংগ্রহ থাকার পরও ক্রেতার অভাব। বইয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পাঠকরা।’
এবারের বইমেলায় বিক্রেতাদের লোকসানসহ নানা সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি প্রচার প্রচারণাকে দায়ী করছেন। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে সংবাদ প্রচারের জন্য এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদকই প্রথম মেলার অবস্থার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন বলেও জানালেন তিনি।
তাঁর স্টলে তুলনামূলক কোন বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে এমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোহাম্মদ আবুল হোসাইন হেলালীর লেখা ‘কাব্য কাননে সুরা বাক্বারা’, মো. গোলাম নেওয়াজ বাবুলের ‘আল-কুরআনের নান্দনিকতা ও আদর্শবাদ’, কালাম চৌধুরীর ‘চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধ’ ও আমিনুর রশীদ কাদেরীর লেখা ‘চা দেশে দেশে’ বইটি মোটামুটি পাঠক কিনছে।’
মেলায় অংশগ্রহণকারী স্টল- গ্রন্থকুটির, একাত্তর প্রকাশনী, মেরিট ফেয়ার প্রকাশনসহ অনেক স্টলে নতুন নতুন ১০০ রকমের উপরে বই সংগ্রহ থাকলেও ৪দিনে প্রতি স্টল ৫০ কপির উপরে বিক্রি করতে পারে নাই।
বই কিনতে আসা সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রী নাজনীন রুহি বলেন, ‘বইপ্রেম যাদের হৃদয়ে রয়েছে তারা মেলার খোঁজখবর নিয়ে মেলায় আসবে এবং পছন্দের লেখকের বই কিনবে। আমিও মেলায় আসলাম, ৩টা বই কিনেছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে ৭ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে মেলার শুভ উদ্বোধন হলেও মেলা এখনো মেলা জমে উঠেনি। বিক্রেতাদের দাবি- সামনের ৩দিনে যদি অধিক বই বিক্রি না হয় তবে ক্ষতি গুনতে হবে মেলায় অংশ নেয়া প্রতিটি প্রকাশনীকে। এভাবেই বই কম বিক্রি হলে ভবিষ্যতে বইমেলার উপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।