সিবিএন ডেস্ক:
আজ বুধবার দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৬১৪ জন। ২ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ৩ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ২ মার্চ সকাল ৮টা) পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছিলেন ৫১৫ জন। শুধু এই দুদিনেই নয়, আজকের শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত প্রায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে দৈনিক রোগী শনাক্ত হচ্ছিলো ৬০০ জনের নিচে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর ৬০২ জন রোগী শনাক্তের কথা জানায়।

নতুন করে কেন করোনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষের মধ্যে ‘গা-ছাড়া’ ভাব তৈরি হয়েছে। অনেকেই ভাবছেন টিকা এসে গেছে, সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে না। সেই সঙ্গে যারা টিকা নিয়েছেন তারাও অসচেতন হয়েছেন। যার কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে এখন ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৯তম অবস্থানে।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর ঠিক ১০ দিন পর প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার তিন দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২ মার্চ ছিল তিন দশমিক ৩৬ শতাংশ আর ১ মার্চ শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৩১ শতাংশ। তার আগের দিন অর্থাৎ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৮৭ শতাংশ।

‘রোগী বাড়ছে’ মন্তব্য করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কিছু দিন ধরে করোনা রোগী বেশি পাচ্ছি। মাঝখানে রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। অনেকদিন ধরে এটা প্রায় একই হারে ছিল। গত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে রোগী বেশি পাচ্ছি। আজ ছিল ১৪ শতাংশ, গতকাল ১৬ শতাংশ, তার আগের দিন ছিল ১৭, আর তার আগের দিন ছিল ১৯ শতাংশের মতো।’

ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘কেবল তা-ই নয়, হাসপাতালেও করোনার রোগী ভর্তি হওয়া বেড়েছে। শ্বাসকষ্ট এবং করোনার লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। মাঝে এটাও কমে গিয়েছিল।’

রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে ডা. নুসরাত বলেন, ‘যখন রোগী শনাক্তের হার কমে গেলো তখন মানুষ রিলাক্টেন্ট হয়ে যায়। মানুষ ধরেই নিয়েছিল করোনা বাংলাদেশ থেকে কমেই যাচ্ছে। যার কারণে তাদের মধ্যে ফলস সেন্স অব সিকিউরিটি তৈরি হয়েছে। মাস্ক না পরা, হাত না ধোয়াসহ তাদের ঘোরাফিরা বেড়েছে। মানুষ কী হারে বেড়াতে যাচ্ছে সেই ছবিও দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মানুষের গ্যাদারিং অনেক বেড়ে গেছে। অথচ জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য শুরু থেকে বলা হয়েছে।’

‘দ্বিতীয়ত, টিকা দেওয়ার পর মানুষ মনে করছে সে প্রটেক্টেড হয়ে গেছে। যেটা একদমই সত্যি না’, বলেন ডা. নুসরাত সুলতানা।

নারায়ণগঞ্জের গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. রোখসানা রায়হান বলেন, ‘রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ বন্দর আর সোনারগাঁ এই চার উপজেলা আমি কাভার করি। এখানে মাঝে অনেক দিন রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। তখন এখানে যারা টেস্ট করতেন তাদের মধ্যে ঢাকা থেকে এসে টেস্ট করা মানুষের সংখ্যাই বেশি ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় মানুষের মধ্যে পজিটিভ হওয়ার হার বেড়েছে অনেক বেশি। গত সপ্তাহ এবং চলতি সপ্তাহে সাত থেকে ১০ শতাংশের মতো রোগী শনাক্তের হার পাওয়া যাচ্ছে, যেটা মাঝে একেবারেই শূন্য থেকে এক শতাংশ হয়ে গিয়েছিল।’

ডা. রোখসানা রায়হান বলেন, ‘প্রথম থেকেই নারায়ণগঞ্জ অনেক বেশি সংক্রমিত হয়েছিল। এই জেলাকে হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছিল শুরুর দিকে। এখন রি-ইনফেকটেড হচ্ছে কিনা সেটাও একটা আশঙ্কা হতে পারে। মানুষের সচেতনতাও কমেছে, যার কারণে রোগী বাড়ছে।’

টিকা নেওয়ার পর মানুষ মাস্ক পরছে না জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘মাস্ক না পরার স্বাধীনতা টিকা দেবে না। এজন্যই আমরা বলছি টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকাই একমাত্র টুল নয়, টিকা হলো অন্যতম টুল। সঙ্গে মাস্ক পরতেই হবে, হাত ধোয়া জারি রাখতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, জনসমাগমে যাওয়া যাবে না এবং যদি যেতেই হয় তাকে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরে থাকতেই হবে।’

রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে কেন জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ব্ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কমেছে। তারা মাস্ক ছাড়াই ঘুরছে। টুরিস্ট স্পটগুলো মানুষে ভর্তি। কারও মধ্যে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। মানুষ আবার সেই গত বছরের ৮ মার্চের আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। যেটা একদম অনুচিত।’

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলে, ‘মাস্ক পরাসহ নানা স্বাস্থ্যবিধি মানতে আবারও সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে অনুরোধ করবো। এখনও আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি। এটাকে ধরে রাখতে না পারলে আবার কঠিন পরিস্থিতির ভেতরে দিয়ে যেতে হবে আমাদের।’ -বাংলা ট্রিবিউন