উদ্বোধন করে মাহবুব উল আলম হানিফ ভুঁয়সী প্রশংসা করলেন এমপি জাফরের

ছোটন কান্তি নাথ :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৮ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণার’ উদ্বোধনের পর উম্মুক্ত হয়ে গেছে সর্বসাধারণের জন্য। গত রবিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্ণার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত দলীয় এমপি আলহাজ জাফর আলমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কর্ণার স্থাপন করা হয়। যাতে বিএনপি-জামায়াতের একসময়ের ঘাঁটি কক্সবাজার তথা চকরিয়া-পেকুয়ার সর্বসাধারণ প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেন।
উদ্বোধনের পর থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এই কর্ণার ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছেন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা অন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস। রপ্ত করছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম ও দেশাত্মবোধ। একইসাথে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার সদস্যদের জীবনাচার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বনেত্রীর মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত হওয়া, তাঁর সরকারের আমলে বিশ্বের কাছ থেকে বড় বড় অর্জনসহ নানা বিষয়ের ওপর স্বচ্ছ ধারণা।
‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণার’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ কর্ণারের বিভিন্ন স্পট দেখে বিমোহিত হন এবং ভূঁয়সী প্রশংসা করেন এমপি জাফর আলমের। কারণ দেশের কোন এমপির পক্ষ থেকে এই ধরণের উদ্যোগ এই প্রথম দেখতে পেয়েছেন তিনি। এজন্য মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং নিজের পক্ষ থেকে এমপি জাফর আলমকে সাধুবাদ জানান।
এদিন চকরিয়া সরকারী কলেজ মাঠের বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে মাহবুব উল আলম হানিফ আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার পরেই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়ে। আপনারা ইতিহাস বিকৃতি করতে চান। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি করার দিন শেষ হয়ে গেছে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনারা জিয়াকে স্বাধীনতা ঘোষক বানাতে চান। তাই আমি আজকে এই জনসভায় বলে যাই, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করেছিলেন ঘুমন্ত বাঙালির ওপরে, সেইসময় বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাত সাড়ে বারোটার সময় ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছিলেন। যার কারণে ২৬ মার্চ দুপুর দেড়টার সময় সেইসময়ের পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহহিয়া খান ওনি বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা করে বলেছিলেন, তাকে চরম শাস্তি এবার পেতে হবে। কারণ সে স্বাধীন রাষ্ট্রদ্রোহ করেছে। সেই ২৬ মার্চের দুপুরেই নিউইয়র্ক টাইমস-এ বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেটাও পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। সেই ইতিহাসের অংশটিও এমপি জাফর আলমের স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণারে’ স্থান পেয়েছে। অতএব ইতিহাস বিকৃতি করার কোন সুযোগ নেই। এজন্য আমি আবারোও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমপি জাফর আলমকে এই কারণে যে, প্রকৃত ইতিহাসটি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণারে তুলে ধরায় নতুন প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণার প্রসঙ্গে মাহবুব উল আলম হানিফ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বর্তমান প্রজন্মের যারা রয়েছেন তাদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণার সত্যিই অনুকরণীয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও তার পরবর্তী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবনচিত্র এবং বাংলাদেশের প্রোপট নিয়ে বঙ্গন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণারে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও এই কর্ণারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও জাতির পিতার সপরিবারের পারিবারিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবধর্মী উল্লেখযোগ্য চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটা বর্তমান প্রজন্মের শিার্থী থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের জন্য শিানীয় ও বিরল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে দৃষ্টিনন্দন কর্ণার করার উদ্যোগ নেওয়ায় চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ জাফর আলমকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
কর্ণার স্থাপন প্রসঙ্গে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখানকার মানুষ বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে সাহস পায়নি। আওয়ামী লীগ যারা করতেন তারা বিএনপি-জামায়াতের রোষানলের শিকার হয়েছেন প্রতিনিয়ত। বিএনপি-জামায়াতচক্র ক্ষমতায় থাকাকালে আমিসহ দলের অনেক নেতাকর্মী চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখানকার দুই প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাসের বদলে বিকৃত ইতিহাস বেশিই জেনেছেন। তাই স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েই প্রথম উদ্যোগটা নিই ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্ণার’ স্থাপনের। আর সেটি সম্পন্ন করতে পেরেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে। এই কর্ণার স্থাপনের মধ্য দিয়ে এখানকার মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।’