সংবাদদাতা:
কক্সবাজার- লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি হ্রাস এবং নির্মূল করতে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম- জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা) আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মত কক্সবাজারের স্থানীয় মহিলা এবং মেয়েদের জন্য সেইফ স্পেস চালু করল। আইওএম-এর স্থানীয় সহযোগী সংস্থা পালস বাংলাদেশ-এর সহযোগীতায় এবং ইউএস ফরেন ডিজেস্টার অ্যাসিস্ট্যান্স কার্যালয় ও জাপান সরকারের অর্থায়নে চালু হল মহিলা এবং মেয়েদের জন্য এই সেইফ স্পেস।

২০১৫ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আনুমানিক শতকরা ৭৩ জন বিবাহিত বাংলাদেশি নারী তাদের জীবনে গৃহ-নির্যাতন বা পারিবারিক-সহিংসতার শিকার হয়েছেন। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি), বিশেষত জীবনসঙ্গীর উপর সহিংসতা এবং বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমসহ শিশুসুরক্ষা বিষয়গুলোকে বিশদভাবে উপস্থাপন করে এমন এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে কোভিড-১৯ কেবল এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়েছে।

কোভিড-১৯-এ চলাচলে সীমাবদ্ধতার কারণে আয়ের সুযোগ আরো কমেছে ফলে মহিলা-নেতৃত্বাধীন পরিবারগুলোসহ পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাশাপাশি, মহামারীটি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ) পরিষেবাগুলিতে তাদের নিরাপদ অভিগম্যতাকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।

আইওএম ইতোমধ্যে কক্সবাজারের নয়টি শরণার্থী শিবিরজুড়ে মহিলা এবং মেয়েদের জন্য এমন কিছু সেইফ স্পেস পরিচালনা করছে যেখানে জীবন রক্ষাকারী তথ্য এবং সচেতনতাবৃদ্ধি কার্যক্রমের পাশাপাশি কমিউনিটি পর্যায়েও প্রচার কার্যক্রম চালু রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত, আইওএম-এর জিবিভি টিমগুলো এই সেইফ স্পেসগুলোর মাধ্যমে ৬,৮২০ জন মহিলা এবং মেয়েদের দলভিত্তিক মনো-সামাজিক সহায়তা প্রদান করেছে।

কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার রত্না পালং ইউনিয়নে অবস্থিত নতুন এই সেইফ স্পেসে স্থানীয় নারী এবং মেয়েরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা পাবে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া নারী এবং মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্য, আইনী এবং সুরক্ষা সহায়তাপ্রদানকারী বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর পরিষেবাদি এবং রেফারেল তথ্য সন্ধানের জন্য এই সেইফ স্পেসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও কাজ করবে।

আইওএম এবং পালস বাংলাদেশ তাদের সেইফ স্পেসগুলোতে স্বতন্ত্র কেস ম্যানেজমেন্টসহ বিস্তৃত পরিষেবা সরবরাহ করে। পাশাপাশি মহিলা এবং মেয়েরা কাউন্সেলিং এবং মনো-সামাজিক সহায়তা, বিনোদনমূলক কার্যকলাপ, সুরক্ষা পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্য, স্বাস্থ্য, শিশু যত্নের নির্দেশিকা, আইনী অধিকার, নন-ফুড আইটেমগুলোতেও সেবা পেয়ে থাকে এই সেইফ স্পেসগুলোতে।

এই সেইফ স্পেসগুলোতে আসা অনেক নারীই বাড়িতে কোনও সমর্থন না পেয়ে খুব কম রিপোর্ট করেছেন। তাদের সমমনাদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ প্রদান করে, আইওএম-এর জিবিভি টিম এসব নারীদের মধ্যে দুরত্ব কমিয়ে সামাজিক নেটওয়ার্ক গঠন ও সমাজ জীবনে তাদের একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে যার মাধ্যমে এসব নারীদের মনস্তাত্ত্বিক উন্নতি সাধন হয়।

আইওএম বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেনঃ “এটি এমন একটি স্থান যেখানে মহিলা এবং মেয়েরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ করতে পারে এবং তাদের সমবয়সীদের কাছ থেকে বিচারের ভয় ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা পেতে পারে। আমরা আশা করি যে এই স্থানটি অবশেষে একটি মহিলা-নেতৃত্বাধীন বহুমুখী কেন্দ্রে পরিণত হবে এবং নারী এবং মেয়েদের এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে বিকশিত হবে।“

পাশাপাশি এই সেইফ স্পেসটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ মডিউল যেমন সেলাই, স্যানিটারি প্যাড উৎপাদন, বাগান করা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে দক্ষতা বিকাশ এবং মহিলা ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের উপর জোর দেবে, যা জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা পরবর্তীতে প্রশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হবেন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অন্যান্যদের কোচিংয়ে সহায়তা করবেন। কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবীরা এলাকাভিত্তিক সুরক্ষা কার্যক্রম যেমন সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম এবং রেফারেল পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন, যা নারী এবং মেয়েদের নিজের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে বানানো পাঠ্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করবে।

লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি)-এর ঝুঁকি হ্রাসে পুরুষের অংশগ্রহণ মূল বিষয় বলে বিবেচনা করা হয়। আইওএম এই বিষয়টিকর আরো ফলপ্রসুভাবে এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পাইলট-ভিত্তিক কাজ করবে এই সেইফ স্পেসে। এই কার্যক্রমে কিশোর-কিশোরীদের জন্য বয়ঃসন্ধি, জিবিভি এবং এসআরএইচ বিষয়গুলো নিয়ে স্কুল পরবর্তী ক্লাসের আয়োজন করা হবে এবং পুরুষ ও ছেলেদের জন্য কমিউনিটি দিবস অন্তর্ভুক্ত করা হবে।