লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাতের অন্ধকারে নামমাত্র অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে এক কৃষকের অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগদলীয় জমি জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, কৃষকের সৃজিত বাগান থেকে বিভিন্ন সময় ২০-২৫ বছর বয়সী ১১২টি সেগুন গাছও কেটে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষ। উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের পশ্চিম লাইনঝিরি গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়ারা ঘর নির্মাণ ও গাছ কেটে নিয়ে জমি জবর দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক মো. নুরুজ্জামান (৫০)। ভুক্তভোগী কৃষক নুরুজ্জামান জমি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে জমি দখল বেদখলকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় অপ্রতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, লামা উপজেলার ২৯৩নং ছাগল খাইয়া মৌজার ২৬৭নং এজমালি হোল্ডিং মূলে মো. নুরুজ্জামান ও তার বোন জাহানারা বেগমের নামে পশ্চিম লাইনঝিরি গ্রামে এক একর দ্বিতীয় শ্রেণী ও ক্রয়সূত্রে ৩৬৫/২০১১নং বায়না নামা মূলে এক একর জমি রয়েছে। বহু অর্থ ও কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ফলজ গাছের বাগান সৃজন করে গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগ করে আসছেন। এর আগে এ জমি নুরুজ্জামানের বাবা কফিল উদ্দিন ১৯৬৬ সাল থেকে ভোগ করেছেন। বর্তমানে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির ওপর শাহ আলমের ছেলে মো. মাসুক মিয়াসহ অন্যদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা জমি দখলে নিতে বিভিন্ন সময় অপচেষ্টা শুরু করেন। পরে কৃষক মো. নুরুজ্জামান প্রতিকার চেয়ে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল পৌরসভার মেয়র বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মো. মাসুক মিয়াসহ অন্যরা দা, খন্তা কুড়াল ও করাত নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে নুরুজ্জামানের সৃজিত বাগান থেকে ১০০টি সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যান। গত ১ ডিসেম্বর বিকালে বিরোধ সমাধানের লক্ষে থানা পুলিশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ গনমান্য ব্যক্তিবর্গ সার্ভেয়ার দ্বারা জমি পরিমাপ করার জন্য গেলে মো. মাসুক মিয়াসহ অন্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুজ্জামানকে মারধর করেন। পরদিন ভোর ৫টার দিকে বাগানের ২০-২৫ বছর বয়সী ১২টি সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৪টি সীমানা পিলারও তুলে নিয়ে যায় মো. মাসুক মিয়াসহ অন্যরা। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে মো. মাসুক মিয়াসহ ৭ জনকে বিবাদী করে উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে বিচারক বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন বলে জানান পুলিশ।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা নুর আলম ও নুরুদ্দোজাসহ অনেকে বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে নুরুজ্জামানের বাবা এরপর ১৯৮০ সাল থেকে নুরুজ্জামান বিরোধীয় জমি জমি নুরুজ্জামানরা ভোগ করতে দেখেছি। কিন্তু সম্প্রতি ওই জমি মো. মাসুক মিয়াসহ অন্যরা কি মূলে দাবী করছেন তা বোধগম্য নয়। আমরা সত্য কথা বলায় এখন মাসুক মিয়াসহ অন্যরা আমাদেরকে মারধরসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছেন।

লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আবু সুফিয়ান জানায়, নুরুজ্জামান ও মাসুকদের মধ্যে জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে নিরসনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাসুক মিয়ারা বিশৃঙ্খলা করায় বিরোধটি মিমাংশা করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম বলেন, কারো জমিতে নয়; আমরা আমাদের জমিতে ঘর নির্মাণ করেছি। তাছাড়া নুরুজ্জামানের বাগান থেকে সেগুন গাছ কাটার অভিযোগও সত্য নয়।

এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আশরাফ আলী বলেন, নুরুজ্জামানের মামলার অভিযোগ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।