তাওহীদুল ইসলাম নূরী :
২০২০ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। গতানুগতিক প্রতিবাদ ও গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। কিন্তু, সেই রেশ কাটতে না কাটতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আবারও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক অসহায় নারী। ভিডিও ধারণ করে বখাটেরা যেটার সুযোগ নিয়ে গত তিন বছরের বিভিন্ন সময় মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। বর্তমানে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ধর্ষিতা ঐ নারীই নিখোঁজ রয়েছেন দাবি তার মায়ের।
‘২০১৮ সাল থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ইমন, রাসেল আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। এ বিষয়ে নিষেধ করলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ‘আমাদের কথায় রাজি না হলে তোর মাকে মেরে ফেলব’। কথাগুলো বলছিলেন ভুক্তভোগীর মা।
তিনি বলেন, ‘একদিন তারা দুইজনই আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে কৌশলে কোমলপানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে অস্ত্রের মুখে আমার মেয়েকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। পরে এক দোকানিকে ডেকে এনে জোর করে মেয়ের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। পরে ওই ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় এবং একাধিকবার তার মেয়েকে ধর্ষণ করে।’
বেগমগঞ্জ থানায় এ ঘটনায় একই এলাকার রাসেল (২৫), জোবায়ের (২৪), সাইফুল ইসলাম ইমন (২২) এবং ফয়সাল নামের চার যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর মা। বেগমগঞ্জ পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলাম ইমন ও ফয়সালকে গ্রেফতার করে।
ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রীর মা বলেন, ‘ বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েও রেহাই পাই নি। বিয়ের পরে মেয়ে বেড়াতে আসলে তাকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা ঘর থেকে ৫০ হাজার টাকা, ১ ভরি স্বর্ণালংকারও নিয়ে যায়। এরপর থেকেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নিয়মিত চাঁদা নিতে থাকে।’
আবেগাপ্লুত তিনি আরও জানান,‘দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলি নি। এর আগে থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাই নি। গণমাধ্যমকর্মীদের সাহায্যে পুনরায় আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’
বর্তমানে উপজেলার আলাইয়ারপুরে হীরাপুর গ্রামের ওই ছাত্রী প্রায় দুইমাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তার মা বলেন, ‘বিয়ের পরে মেয়ে বাড়িতে বেড়াতে আসলে তাকে তুলে নিয়ে যায়। উঠিয়ে নেয়ার তিন মাস পরে রাসেলকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মিরপুরের একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে আনি। এ ঘটনার ১৫ দিন পর রাসেল পুনরায় মেয়েকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। ১০ দিন পর আবারও ১০ হাজার টাকা দিয়ে মেয়ে নিয়ে আসি।’
জানা যায়, সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রাসেল আবারও ঐ মেয়েকে নিয়ে যায়। এখন সে কোথায় আছে, কীভাবে আছে তার পরিবারের কাছে অজানা। গত সপ্তাহে রাসেল ১ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। টাকা না দিলে ভুক্তভোগীকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে ঐ সন্ত্রাসী।
বেগমগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার বলেন, ভুক্তভোগীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।