তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

রেড কোরাল। বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিরল প্রজাতির একটি সাপ। ধারণা করা হচ্ছিল এই প্রজাতির সাপ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এমনই একটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে। এর নাম রেড কোরাল কুকরি হলেও স্থানীয়ভাবে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমলবতি’।

বিরল প্রজাতির এই সাপটি ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে কদাচিৎ দেখা মিললেও দেশে এবারই প্রথম এমন সাপের দেখা পেয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, যেহেতু সাপটি বিরল প্রজাতির তাই এটি নিয়ে গবেষণা খুব একটা বেশি হয়নি। স্বল্প মাত্রার বিষাক্ত বলা হলেও এ নিয়ে বিশদ গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো দেখা যাওয়া বিরল প্রজাতির রেড কোরাল কুকরি স্নেক নিয়ে আসা হচ্ছে চট্টগ্রামে।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সাপের এই প্রজাতিটি দেখা গেছে। অন্যদিকে পুরো পৃথিবীতেই মাত্র ২০-২২ বারের মত দেখা গেছে এই সাপ।

বিরল প্রজাতির সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে। সাপটির ইংরেজি নাম Red Coral Kukri/Aligodon Kheriensis Snake.

লাল প্রবাল সাপটি মৃদু বিষধারী ও অত্যন্ত নিরীহ। এই সাপটি পৃথিবীর দুর্লভ সাপদের একটি। পৃথিবীতে হিমালয়ের পাদদেশ দক্ষিণে ৫৫ আর পূর্ব-পশ্চিমে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায়। পৃথিবীর ২১তম সাপটি মৃত অবস্থায় ও ২২তম সাপটি মারাত্মকভাবে আহতাবস্থায় পাওয়া গেছে।

পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারের পাসের একটি উঁচু জায়গা এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে কাটার সময় একটি সাপ বেরিয়ে আসে। তখন এলাকাবাসী আমাকে খবর দেন। সেখানে গিয়ে ৮টি সাপ উদ্ধার করি। সাপগুলো হচ্ছে– রেড কোরাল একটি, দাঁড়াশ সাপ দুটি, গুঁইসাপ একটি, হেলে দুটি, কৃষ্ণ কালাচ একটি।’

তিনি বলেন, ‘এক্সেভেটরের আঘাতে পেটের কাছে আঘাত লেগে সাপটির নাড়ীভুঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল। সুস্থ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পাঠানো হবে।’

খবর পেয়ে রেড কোরাল সাপটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিআরসির প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বিরল প্রজাতির সাপ রেড কোরাল কুকরির গায়ে এস্কেভেটরের আঘাত রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক ও সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান, সাপটি মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। সাপটি বর্তমানে রাজশাহীর রাজশাহী স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছে। সুস্থ হওয়ার পর সেটিকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হবে।

সাপটির প্রাণের শঙ্কা এখনও কাটেনি বলে জানিয়ে বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, ‘সাপটির নাড়ীভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ায় সেটি এখনো খুবই জটিল অবস্থায় আছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে তার। আমরা এটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যান্ডেজ করলেই সাপটি নড়াচড়া করে সেটি খুলে ফেলছে, যে কারণে তার চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় লাগছে।’

সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান, সর্বপ্রথম এই সাপের দেখা মেলে ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশে। সেই নামানুসারেই জুওলোজিক্যাল নামকরণ করা হয়েছে oligodon kheriensis. দীর্ঘ ৮২ বছর পর ২০১৯ সালে আবার উত্তরপ্রদেশের খেরি জেলায় দেখা গিয়েছিল লাল প্রবাল সাপটি। এ ছাড়া নেপালের মহেন্দ্রনগর, চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক, ভারতের নৈনিতাল, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়।

এদিকে, গবেষকরা বলছেন, এ ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয় বিরল প্রজাতির সাপ দেশে এখনও বিদ্যমান। শুধু তাদের আবাস চিহ্নিত করে সেটি বিনষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারলে হয়তো এদের বিলুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানো যাবে।