সিবিএন ডেস্ক:
বিমানের মেকানিক্যাল শাখার মাহবুবুল আলম মিঠু স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে দেড়শ পিস স্বর্ণের বার বিশেষ কায়দায় বিমানের সিটের নিচে লুকানো অবস্থায় উদ্ধার করেছে কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও এনএসআই। শুধু সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নয় এর আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ বিমানের ভেতর বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্বর্ণের বারের খোঁজ পাওয়া গেছে। বাহকহীন এসব স্বর্ণের বার মাঝে মাঝে উদ্ধার করা গেলেও কত চালান যে চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তা উড়িয়ে দিচ্ছেন না খোদ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও। বিমানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে স্বর্ণের এসব চালান আনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটির দুজন কর্মচারী জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অভিযানে সম্পৃক্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বিমানের মেকানিক্যাল শাখার মাহবুবুল আলম মিঠু এবং ক্লিনার হারাধন স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাদের হাতে নাতে আটক করা না গেলেও দীর্ঘদিন ধরে নজরদারিতে রয়েছেন এ দুজন। এমনকি একাধিক সংস্থা তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে বেশ কয়েকবার। যদিও তাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও এনএসআই কর্মকর্তারা যৌথভাবে বিমান বাংলাদেশের একটি বিজি-১২৮ ফ্লাইট থেকে ১৭ কেজি ৪শ’ গ্রাম ওজনের প্রায় ১০ কোটি টাকার স্বর্ণের বার উদ্ধার করে। সোমবার সকালে আবুধাবি থেকে চট্রগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটটিতে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণবার রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা এবং এনএসআই কর্মকর্তারা। তল্লাশির এক পর্যায়ে ফ্লাইটটির ১৮ এফ সিট ও ২৬ এ সিটের কুশনের নিচে এসি প্যানেল থেকে বিশেষ দুটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। পরে প্যাকেট দুটি থেকে ১৭ কেজি ৪শ’গ্রাম ওজনের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণেরবার উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, সুরক্ষিত জয়গায় এভাবে স্বর্ণ পাচারের সাথে বিমানের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে। ভেতরের কেউ জড়িত না থাকলে এভাবে স্বর্ণবার আনা সম্ভব নয়। সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর বিমানে তল্লাশি চালাতে ওঠেন কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও এনএসআই কর্মকর্তারা। তখন ক্যাটারিং সার্ভিসের লোকজন ও দুয়েকজন ক্লিনার বিমানে ছিল। যেভাবে বসার সিটের লেদার কভারের নিচে বেশ কয়েক সারি পরপর কালো পলিথিনে মোড়ানো সোনার বারগুলো রাখা ছিল, তা কারও জানা না থাকলে খুঁজে বের করতে অনেক সময় লাগবে। এসব বিভাগের কর্মীরা নেমে আসার সময় খাবারের ক্যাবিনেটে বা ময়লার প্যাকেটে করে সোনার বার নামিয়ে নিয়ে আসা সম্ভবপর। তাই বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখতে নারাজ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার রোকসানা খাতুন বলেন, ‘আমরা যেহেতু স্পটে কাউকে পায়নি তখন সুনির্দিষ্ট করে কারো নাম বলা উচিত নয়। তবে যেভাবে বিমানের সিটের নিচে বিশেষ কায়দায় স্বর্ণের বারগুলো রাখা ছিল তা অবশ্য সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে আনা সম্ভব নয়। হয়তো কোনও টেকনিক্যাল পারসন বা বিমান সংশ্লিষ্ট যে কেউ এসব কাজে জড়িত থাকতে পারে। আসলে এসব সবই অনুমান নির্ভর কথা। আমরা থানায় একটি জিডি করেছি। আর আমাদের আইন অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত চলছে।’

এরআগে গত ১৫ অক্টোব চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি১৪৮ ফ্লাইটের আসনের নিচ থেকে ১৬০ টি স্বর্ণের বারের চালান জব্দ করা হয়েছে। ওই ফ্লাইটের ৩৩ নম্বর সিটের নিচে কালো টেপে মোড়ানো ২টি বান্ডেল এবং ২৯ নম্বর সিটের পাশ থেকে আরেকটি পলিথিনে স্বর্ণের বারগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এসব স্বর্ণের দাম প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তারআগে গত বছর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজ এলাকা থেকে একটি শপিং ব্যাগে পরিত্যক্ত অবস্থায় সোনার ৫২টি বার জব্দ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। দুবাই ফেরত বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজে এসব বার আনা হয়। গত কয়েক বছরে বাহক সহ অনেক চালান ধরা পড়লেও গোয়েন্দা সংস্থা ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় মাঝে মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্বর্ণের চালান জব্দ করে বিমান বন্দরে নিয়েজিত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানকে ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মচারী, বিভিন্ন বিমান সংস্থার ক্রু, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং ইমিগ্রেশন পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যের যোগসাজশে ওই সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যে কিছু সোনার চালান আটক হলেও সিংহভাগই নিরাপদে বেরিয়ে যাচ্ছে। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। -সিভয়েস