আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:

এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ঠিকমতো তিন বেলা ভাত খেতে দেওয়া হয় না, মরিচ মেখে ভাত খেতে বাধ্য করা, তীব্র শীতের মধ্যে নিশিরাতেও কাজ করতে বাধ্য করা, কথামতো কাজ না করলে জালের রশি টানার লাঠি দিয়ে বেদড়ক পিটিয়ে আহত করার পরেও পাওনা টাকা পরিশোধ না করে জিম্মি রেখে প্রতিনিয়ত কেচকি জালের খোপে কাজ করানো হচ্ছে নীরিহ সাতজন শ্রমিককে। রাঙামাটি শহরের উপকন্ঠে কাপ্তাই হ্রদেই চলছে এই ধরনের মর্ধযুগীয় বর্বরতা। ক্ষমতাসীন দলের এক নেত্রীর প্রত্যক্ষ মদদেই চলছে এমন অমানবিক কর্মকান্ড। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, থাকা-খাওয়া নিশ্চিতের পাশাপাশি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নীরিহ হতদরিদ্র শ্রমিকদের এনে জিম্মি করে রেখে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার কাজে বাধ্য করছে প্রভাবশালী একটি চক্র।

রাঙামাটি শহরের কোতয়ালী থানাধীন কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বালুখালী এলাকায় সাতজন শ্রমিককে নির্মম নির্যাতন করে জিম্মি রেখে জালের নৌকায় কাজ করাচ্ছে জনৈক হেলাল নামের এক মাছ ব্যবসায়ি। জিম্মিদশায় থাকা শ্রমিকরা হলেন,(১) মোঃ রহিম-৪০,সে বরিশালের স্বরূপকাঠি থানাধীন ইন্ধারহাট ইউনিয়নের বিঞ্চুকাটি গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হাওলাদারের সন্তান।(২) রাকিবুল ইসলাম-১৭, সে ভোলা’র চরফ্যাশনের আমেনাবাদ এলাকার আব্দুস কুদ্দুস এর সন্তান। (৩) মোঃ রুবেল-১৮, সে ঝালকাটি জেলার কাঠালিয়া থানাধীন পাতিয়ালঘাটা ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ডের জুলখালি গ্রামের মনির হোসেনের সন্তান।(৪) মোঃ জিসান-২২, তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির চশৈলপাল পাড়াস্থ হাজিবাড়ি এলাকায়। তার বাবার নাম: আব্দুল জলিল। (৫) নাসির-১৮, সে দিনাজপুর জেলার বিরলথানাধীন ৯নং ইউপি’র মঙ্গলপুর গ্রামের ছিদ্দিক হোসেনের সন্তান। (৬)মোঃ রাশেদ মিয়া-৩০, সেকিশোরগঞ্জ জেলাধীন ছাতির ইউপি’র ছাতির চর গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে। (৭) মোঃ ফরিদ-১৫,তার বাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়ায়। বাবার নাম: জলিল, গ্রাম ইলিশিয়া, থানাঃ চকরিয়া।

স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা সাংবাদিকদের দেখেই তাদের উপর চলতে থাকা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেয়।

জিম্মি শ্রমিকরা জানায়, মাছ ব্যবসায়ি হেলাল তাদেরকে ঠিকমতো খাবার-দাবার নাদিয়ে রাত-দিন একাধারে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায়। এতে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও নূন্যতম চিকিৎসাও করায় না হেলাল। প্রতিদিনই মরিচ মেখে ভাত খেতে দেওয়া হয় শ্রমিকদের। এছাড়াও হেলালের ভাগিনা নয়নকে দিয়ে শ্রমিকদেরকে বেদড়ক পিটিয়ে প্রতিনিয়তই ভীতিকর পরিস্থিতিতে রাখা হচ্ছে তাদের। এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রতিবেদকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারের জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে শ্রমিকদের জিম্মির বিষয়টি জানায়। পরবর্তীতে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন থানার এসআই ওসমান এর এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিমকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। এরই মধ্যে শ্রমিকদের উদ্ধারে থানা পুলিশের টিম রওয়ানা দিয়েছে এমন তথ্য সাংবাদিকদেরকেও নিশ্চিত করে কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মাছ ব্যবসায়ি হেলাল ও তার ক্যাডার ভাগিনা ঘটনাস্থল থেকে বোটযোগে পালিয়ে যায়।

এদিকে এই ঘটনার পর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তিনজন গণমাধ্যমকর্মী(এশিয়ান টিভি, বাংলাভিশন ও চ্যানেল ২৪) ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার পরপরই অভিযোগকারি শ্রমিকদের ধরে নিয়ে হাত-পা বেধে পাহাড়ি এলাকায় অজ্ঞাতস্থানের দিকে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বালুখালীর তথাকথিত মেম্বার আছিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মাছ ব্যবসায়ি হেলাল ও তার ভাগিনা নয়ন একটি ইঞ্জিন চালিত বোটে করে উক্ত সাতজন শ্রমিককে বেধে অজ্ঞাত স্থানের দিকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে স্থানীয় অধিবাসিরা জানিয়েছেন।

কোতয়ালী থানার এসআই ওসমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আমরা জিম্মিদশা থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। তবে আমরা জানতে পেরেছি যে, হেলাল ও তার ভাগিনা নয়ন মিলে শ্রমিকদের বটতলাপাড়ার দিকে নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমি আমার সার্কেল এসপি মহোদয়কে অবহিত করেছি এবং হেলালের নামোল্লেখ করে থানায় একটি জিডি করে রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এসআই ওসমান।