অনলাইন ডেস্ক :

প্রথম ধাপে ২৬ জেলার চার শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব জেলার ৪৭৯টি ইউপির তালিকাও তৈরি করেছে। এগুলোতে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ও ৭ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটার তালিকার সিডি তৈরির সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে কত সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে।

বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার বৈঠকে বসছেন নির্বাচন কমিশনাররা। এই সভায় কতটি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম ধাপে ভোট হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, কত সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করা হবে তা নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করা হবে। কমিশন যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।

জানা গেছে, আজ অনুষ্ঠেয় কমিশনের ৭৬তম সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। সভায় দুটি এজেন্ডা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২১ এর প্রস্তুতি এবং ৬ষ্ঠ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। আরও জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে ৪ হাজার ৩২১টিতে ভোটগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ওই বছরের ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৫২টি ও একই বছরের ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৮৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ), আইন, ২০০৯ (৩) অনুযায়ী, আগামী ২১ ও ৩০ মার্চের মধ্যে এ দুই ধাপের ভোট করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান থাকায় মার্চে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনের সময় ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে ইসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ), আইন, ২০০৯ অনুযায়ী বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সভা থেকে মেয়াদ পাঁচ বছর। এ সময়কাল বিবেচনা করে আগামী মে মাসে মেয়াদ শেষ হচ্ছে এমন সব ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২৬টি জেলার ৪৭৯টি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মেয়াদ এপ্রিল ও মে মাসের বিভিন্ন সময়ে শেষ হবে। ওইসব ইউপিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, আগামী ১৪ এপ্রিল রোজা শুরু হতে পারে- এমন বিবেচনায় এপ্রিল মাসে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে। এক্ষেতে আগামী ৭ এপ্রিল ভোটগ্রহণের জন্য ‘ভালো সময়’ হিসাবে বিবেচনা করছে ইসি। সেক্ষেত্রে মার্চের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ওই নির্বাচনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ছবিসহ ও ছবি ছাড়া- এই দুই ধরনের ভোটার তালিকার সিডি তৈরি করতে হবে কমিশনকে। এসব সিডি তৈরির কাজ শুরু করতে হবে আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর। ওই সিডি তৈরির সক্ষমতা বিবেচনা করে কতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

সেক্ষেত্রে প্রথম ধাপে কমবেশি চারশ ইউপিতে প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগসহ উপকূলীয় এলাকা প্রাধান্য দেওয়া হবে। বর্ষা মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় ভোটকেন্দ্রে মালামাল পরিবহন কষ্টকর হয়ে পড়ে।

প্রথম ধাপে যেসব জেলা : জানা গেছে, যেসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ আগামী ৩০ মে পর্যন্ত রয়েছে সেগুলোকে প্রথম ধাপের তালিকায় রাখা হয়েছে।

এগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার তিনটি, বাউফলের ছয়টি, দশমিনার তিনটি ও গলাচিপার ছয়টি ইউপি। বরিশাল সদর উপজেলার ৮টি, বাকেরগঞ্জের ১১টি, উজিরপুরের ৬টি, মুলাদীর ৬টি, মেহেন্দিগঞ্জের ৫টি, বাবুগঞ্জের ৪টি, গৌরনদীর ৭টি, হিজলার ৪টি, আগৈলঝাড়ার ৬টি ও বানারীপাড়ার ৭টি। বরগুনার সদরের ৯টি, আমতলীর ৬টি, বেতাগীর ৭টি, বামনার ৪টি ও পাথরঘাটার ৭টি। পিরোজপুরের সদরের ৪টি, ভান্ডারিয়ার ৫টি, ইন্দুরকানির একটি, মঠবাড়িয়ার ৬টি, নেছারাবাদের ১০টি, কাউখালীর ২টি ও নাজিরপুরের ৪টি। ঝালকাঠি সদরের ৯টি, নলছিটির ১০টি, রাজাপুরের ৬টি ও কাঁঠালিয়ার ৬টি। ভোলা সদরের ২টি, দৌলতখানের ৫টি, বোরহানউদ্দিনের ২টি, তজুমদ্দিনের ৩টি ও চরফ্যাশনের ৭টি।

খুলনার ডুমুরিয়ার ১৪টি, কয়রার ৭টি, দাকোপের ৯টি, বটিয়াঘাটার ৩টি ও দিঘলিয়ার ৬টি। বাগেরহাটের সদরে ৯টি, ফকিরহাটের ৭টি, মোল্লাহাটের ৬টি, চিতলমারীর ৭টি, কচুয়ার ৭টি, রামপালের ১০টি, মোংলার ৬টি, মোরেলগঞ্জের ১৬টি ও শরণখোলার ৪টি। সাতক্ষীরা সদরের ১২টি, কলারোয়ার ১০টি, তালার ১১টি, দেবহাটার ৪টি, কালীগঞ্জের ১২টি ও শ্যামনগরের ৭টি। এছাড়া রংপুরের পীরগাছার ১টি ও পীরগঞ্জের ৪টি, কুড়িগ্রামের চররাজিবপুরের ৩টি, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের ৬টি এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার ১টি। এছাড়া রয়েছে ঢাকার দোহারের ৫টি ও কেরানীগঞ্জের ৭টি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ৮টি, নরসিংদীর পলাশের ২টি, গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৭টি, টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ১১টি, মাদারীপুর সদরের ৮টি ও শিবপুরের ১৩টি। মৌলভীবাজারের জুড়ির ১টি, সুনামগঞ্জের ছাতকের ৬টি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ১টি, চাঁদপুরের হাইমচরের ১টি, লক্ষ্মীপুরের রামগতির ২টি ও কমলনগরের ৩টি, নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৬টি ও হাতিয়ার ৭টি, কক্সবাজারের পেকুয়ার ১টি, মহেষখালীর ৩টি, কুতুবদিয়ার ৬টি ও টেকনাফের ৫টি।