– তাওহীদুল ইসলাম নূরী

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি।
জাতীয় সুন্দরবন দিবস। ২০০১ সাল থেকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য এই দিনটি সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১০০ এর অধিক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ৫ হাজারের অধিক সম্পূরক উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি ছাড়াও অগণিত অসংখ্য বনজ ও জলজ সম্পদে পরিপূর্ণ আমাদের সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সুন্দরবন থেকে প্রতিবছর সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয় হাজার কোটি টাকা। সুন্দরবনকে তাই শুধু উপকূলীয় সাড়ে তিন কোটি মানুষ কিংবা বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ নয় বরং আন্তর্জাতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের কারণে আজ অনিশ্চয়তার পথে সুন্দরবন। নেই আগের মত সৌন্দর্য, বিচরণ কমে গেছে প্রাণীকুলের। অর্থাৎ প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য আগের মত নেই। প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনে সুন্দরবন দিন থেকে দিন হুমকির পথে। অথচ এই সুন্দরবনের সাথে দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের পরিবেশ জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। সুন্দরবন এলাকায় তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ক্ষেত্র আবিষ্কারের অপরিকল্পিত উদ্যোগ, অবাধে বাঘ ও মাছসহ বনজ এবং জলজ প্রাণী নিধন ও শিকার যদি বন্ধ না হয় সুন্দরবন রক্ষা আগামী দিনের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

‘সুন্দরবন জাতির অমূল্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’ এতে কারও কোন সন্দেহ নাই। তাই, সুন্দরবন যেন কোনভাবেই হারিয়ে না যায়, এটার সামান্যও যেন বিলুপ্তি না ঘটে আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সুন্দরবন যে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা সম্পদের আধার তা শুধু নয়। ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে বর্তমানে জরাজীর্ণ এই সুন্দরবনই নিজের বুক পেতে দিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে বার বার রক্ষা করে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় সুন্দরবনের বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। তাই, সুন্দরবনের বনজ ও জলজ সম্পদ সংরক্ষণে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। আগামীর প্রজন্মকে একটি পরিবেশবান্ধব দেশ উপহার দিতে সুন্দরবনকে রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার জানা মতে, দেশে ১০০ কিংবা তার অধিক পরিবেশবাদী সংগঠন আছে। এই পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

সরকার যদি সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর আইন গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পর্যটন, বনজ ও জলজ খাতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত হবে একটি পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ। উপকূলীয় সাড়ে তিন কোটি মানুষসহ সমগ্র দেশের আয়,উন্নতি ও জলবায়ু মোকাবিলাকল্পে অস্থিত্ব রক্ষায় একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে। তাই, আজ সুন্দরবন দিবসে দেশ ও দশের স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে সুন্দরবন রক্ষার শপথ নিতে হবে।

লেখকঃ আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত),আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।