মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:
বান্দরবানের লামা উপজেলায় সদর ইউনিয়নের হ্লাচ্ছাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবহৃত আসবাবপত্র গভীর রাতে চুরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার এ চুরির ঘটনা ঘটে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতেই আমি বিষয়টি জানতে পারি। বিষয়টি বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করি। এই বিষয়ে দুইজন সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে লামা পৌরসভার লাইনঝিরিস্থ মো. রফিকের ভাঙ্গারু দোকানে সরকারি স্কুলের আসবাবপত্র গভীর রাতে বিক্রি হচ্ছে দেখে সন্দেহপ্রবণ হয়ে স্থানীয়রা লামা থানাকে অবহিত করলে পুলিশ মালামাল গুলো আটক করে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইউছুপ আলীর জিম্মায় দেয়।

জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারী হ্লাচ্ছাই পাড়া স্কুলের জরাজীর্ণ গৃহ ও পুরাতন মালামাল প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার ৫শত টাকা দিয়ে ক্রয় করেন বৈল্যারচর এলাকার হাজী মো. নুরুল হোসাইনের ছেলে মো. জহির আহমদ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক স্মারক নং- উশিঅ/লামা/১৯ তারিখ- ১২ জানুয়ারী ২০২১ইং পত্র মূলে নিলাম গ্রহীতা মো. জহির আহমদকে মালামাল অপাসারণের জন্য কার্যাদেশও প্রদান করা হয়। মো. জহির আহমদ বলেন, অফিস আদেশের পরে পুরাতন গৃহটি ভেঙ্গে নিয়ে যেতে শ্রমিক নিয়োজিত করি। নিলামে কিছু জরাজীর্ণ মালামালের কথা উল্লেখ ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি কমিটি আমাকে জরাজীর্ণ মালামাল হিসাবে কিছু কাঠের ও লোহার টেবিল-বেঞ্চ প্রদান করেন। সেখানে ভাঙ্গাচুরা মিলে ২০-২৫টি লোহার বেঞ্চ ছিল। ৭-৮টি লোহার বেঞ্চ ভালো থাকায় সেগুলো আমি স্থানীয় কয়েকজনের কাছে বিক্রি করি আর বাকী ৯-১০টি জরাজীর্ণ লোহার বেঞ্চ স্থানীয় জামাল কারবারীর ছেলে মো. সোহেলকে সোমবার সকাল ৯টায় কেজি দরে বিক্রি করি। মঙ্গলবার গভীর রাতে লাইসঝিরি ভাঙ্গারু দোকানে আটককৃত প্রায় ৭০টি লোহার বেঞ্চ সম্পর্কে আমি জানিনা। অতিরিক্ত বেঞ্চ গুলো সোহেল কোথায় পেল বা তাকে কে দিয়েছে সেটা সোহেল বলতে পারবেন।

মো. সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, আমি লোহার হাই ও লো বেঞ্চ গুলো হ্লাচ্ছাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এনেছি। ভাঙ্গারু দোকানদার মো. রফিক বলেন, সোমবার বেলা ১১টায় ও মঙ্গলবার গভীর রাত ১১টায় দুই দফায় সোহেল আমার কাছে স্কুলের কিছু ব্যবহৃত ও ভালো লোহার আসবাবপত্র বিক্রি করেন। সোহেল আমাকে জানায় এগুলো সে হ্লাচ্ছাই পাড়া স্কুল থেকে এনেছে। লামা থানা পুলিশ লোহার বেঞ্চগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সুরক্ষিতভাবে রাখতে আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।

এবিষয়ে হ্লাচ্ছাই পাড়া স্কুলের দপ্তরী কাম প্রহরী ফরহাদ নেওয়াজ বাপ্পী বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মরিয়ম বেগম আমাকে ফোন করে বলেন, স্কুলের নতুন ভবনের ২য় তলার ছাদে থাকা লোহার বেঞ্চ গুলো স্থানীয় জামাল কারবারীর ছেলে মো. সোহেলকে দিয়ে দিতে। রাত ৮টার দিকে সোহেল গেলে আমি স্কুলের গেইটের তালা খুলে দিই। ১টি টলি গাড়ি দিয়ে মালামাল গুলো সোহেল নিয়ে যায়। তার দুইদিন আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মরিয়ম বেগম ও তার স্বামী তারেক ভাঙ্গারু ব্যবসায়ী সোহেলকে নিয়ে স্কুলের ছাদে থাকা বেঞ্চগুলো দেখায়।

হ্লাচ্ছাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মরিয়ম বেগম সাংবাদিকদের বলেন, চুরির ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আমি কিছু বলতে পারবো না, তাদের কাছ থেকে জেনে নেবেন বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি স্কুলের মালামাল রাতের আধাঁরে বিক্রি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা মালামাল গুলো আটক করে জিম্মায় দিয়েছি। এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।