এম.এ আজিজ রাসেল :
কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমেছে। একই চিত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর। সরকারি—বেসরকারি সন্তোষজনক নানা পদক্ষেপের কারণে এই সফলতা এসেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে জনমনে আতংকের বিপরীতে স্বস্তি ফিরেছে।
সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারী কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ৩৫২ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে ৫ জনের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে। এরমধ্যে কক্সবাজার জেলায় ২ জন , রোহিঙ্গা ৩ জন। জেলায় করোনা ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া ২ জন রোগী মহেশখালী উপজেলার।
এ পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮২৭৯৪ জনের।  পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৫৮৪২ জন। তারমধ্যে রোহিঙ্গা ছিল ৩৮৬ জন। মারা গেছে ৮৩ জন। তারমধ্যে রোহিঙ্গা ১০ জন মারা গেছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৪৮৮ জন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়, কোভিড—১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশনায় কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। জেলা সদর সদর হাসপাতাল ও নতুনভাবে স্থাপিত ফ্রেন্ডশীপ আইসোলেশন সেন্টারসহ ৮ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ৩৭৬টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। তারমধ্যে আইসিইউ ১০টি ও এইচডিইউ বেড রয়েছে ৮টি। এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে ১৩৭২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৯০টি পালস অক্সিমিটার, ১৮৪টি অক্সিজেন ফ্লোমিটার, ২৮৫টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, ২১টি হাইফ্লো নেসাল ক্যানুলা ও ২০টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। সদর হাসপাতাল ও রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু আছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট। বাকিগুলোতে স্থাপন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাছাড়া দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু পর থেকে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ মাস্ক এবং সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বৃদ্ধি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোভিড—১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধেও স্বাস্থ্যকর্মীরা জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন।

জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করছে এনজিও এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তারমধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কক্সবাজারে এনজিও সংস্থা ‘একশন এইড’ নানা কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে। একশনএইড বাংলাদেশ এর সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আব্দুল হালিম সুমন বলেন, কোভিড—১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে একশনএইড বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাক্যাম্প— ১১, ১২, ২৬ ও ২৭ এবং উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে সব মিলিয়ে অন্তত ৬০টি হাতধোয়ার বেসিন বসানো হয়েছে। সেখানে জনসাধারণের হাতধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে একশনএইড। এছাড়া, কোভিড—১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন আবাসিক মাদ্রাসা, মসজিদ এবং বাড়িতে গিয়ে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে জেলাপ্রশাসক, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়েও। একই সাথে উখিয়া, টেকনাফ এবং বিভিন্ন রোহিঙ্গাক্যাম্পে জনসচেতনতামূলক পাপেট শো এবং বাইচকোপ দেখানো হচ্ছে। চলছে সাপলুডু খেলার মাধ্যমে সচেতনতা ক্যাম্পেইন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং স্থানীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়েও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্ক সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে করণীয় এবং চিকিৎসাপ্রাপ্তির বিষয়েও অবগত করা হচ্ছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে। এছাড়া মহামারির এই সময়ে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, বয়োবৃদ্ধ এবং প্রসুতি মায়েদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরামর্শও নেয়া হচ্ছে একএশনইএইডের পক্ষ থেকে।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের ৮ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (আইসোলেশন সেন্টার), জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ। একইসাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও সচেতন করতে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, করোনা নিয়ে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। যার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। তবে সবাইকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। অবহেলা করলে আবারও সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যা রয়েছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, এই শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে সকলে শংকায় ছিল। তবে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় তেমন কোন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। দেশে ইতোমধ্যে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাই ভ্যাকসিনের আওতায় আসলে দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার শূণ্যে নামবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।