এম.এ আজিজ রাসেল :
দীর্ঘ ১২ বছর প্রতিক্ষার পর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। তুলির আচড় ও নানা সাজ—সজ্জায় আধুনিকায়ন হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শহীদ সুভাষ হল। কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী বহু জ্ঞানী—গুণী ও বরণ্য ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজড়িত। এটি জেলার রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র।
জানা যায়, ১৯০৫ কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীর যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনীতিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, নাট্য বক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বই পিপাসুদের আনাগোনায় সরব থাকতো লাইব্রেরী। আর শহীদ সুভাষ হল ঘিরে জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচীতে সমৃদ্ধ হতো সংস্কৃতি চর্চা। নাটক পাড়া হিসেবেও বেশ সুনাম ছিল ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী। এছাড়া শহীদ দৌলত ময়দান ছিল রাজনীতি চর্চার উর্বর ভূমি। দাবা, ক্যারাম ও টেবিল টেনিস পাগলদের জন্যও পাবলিক হল ছিল মিলনকেন্দ্র। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় প্রাণের এই মহান কেন্দ্রের সংস্কারের দাবি তুলেন সুশীল মহল। এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের দীর্ঘ এক যুগ আগে থেকে সংস্কার কাজ শুরু হলেও অবেহলা এবং নানা প্রতিবন্ধকতায় নিমার্ণ কাজ শেষ করতে পারেননি কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। পরে ঢাকার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও অর্ধেকের মধ্যে রেখে চলে যান। সময়মতো বিল না পাওয়ায় তিনি কাজ ফেলে চলে যান। এ নিয়ে মামলাও চলমান ছিল। তবে জটিলতা কাটিয়ে আবারও নির্মাণ কাজের জন্য চুক্তি করেন ঠিকাদার ইসমাঈল ফারুক। ধীরে ধীরে কাজ এগিয়ে নিয়ে গেলেও মাঝপথে ফের চলে যান তিনি। কিছুদিন পর স্থানীয় সরকারের সিনিয়র সচিব হেলালুউদ্দীন আহমেদ ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীর নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন। যার ফলে বর্তমানে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও সুভাষ হলের কাজ প্রায় শেষের পথে। ইতোমধ্যে শহীদ সুভাষ হলকে সাজানো হয়েছে নান্দনিক ডিজাইনে। শিগগিরই কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীসহ শহীদ সুভাষ হল ও শহীদ দৌলত ময়দান ঘিরে আবারও চাঙা হয়ে উঠবে জেলার রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এমনই প্রত্যাশা সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনৈতিক কর্মীদের।
সাবেক ছাত্রনেতা কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব ও রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি এইচ,এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার পাবলিক হলের মাঠি ও ঘাসের সাথে এই শহরের প্রগতিশীল মানুষের অনেক স্মৃতি জড়িত। জেলার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক যে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছিল তার তীর্থ স্থান হল কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি ইনস্টিটিউট চত্বর। কিন্তু উন্নয়নের নামে দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে যেভাবে অবহেলায় পড়েছিল এটি তা কক্সবাজারের প্রগতিশীল আন্দোলনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও পুনরায় যে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে পাবলিক হল তা সাংস্কৃতিক কর্মী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে পুনঃরায় প্রাণের বন্ধন ও গতি ফিরে আসবে বলে আশা করি।
জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠনের সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী সংস্কারে প্রায় একযুগ পেরিয়ে যায়। যার কারণে ঝিমিয়ে পড়ে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিকল্প হিসেবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থাকলে অধিকাংশ মানুষ সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। তাই এক প্রকার নাটক চর্চায়ও ধীরগতি চলে আসে। তবে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী নতুনভাবে গড়ে উঠায় আবারও প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক খোরশেদ আলম বলেন, কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী ঘিরে অনেক আবেগ ও ভালবাসা জড়িয়ে রয়েছে। সংস্কারে দেরী হওয়ায় সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঝে একপ্রকার হতাশা বিরাজ করছিল। কিন্তু এখন হতাশা কাটিয়ে আঁধারে আলো আসবে।
কক্সবাজার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের বদান্যতায় কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী আধুনিকায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি আবারও এখানে সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চর্চা পুরোদমে প্রাণ ফিরে পাবে। এতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে সবাই।