আবুল কাসেম আশরাফ:
অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত আমাদের সমাজ। ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক,রাজনৈতিক ও জাতীয় অঙ্গন সহ সবক্ষেত্রে নৈতিক অবক্ষয়ের ছাপ সুস্পষ্টভাবে পড়েছে আজকের সমাজে।

সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার খবরের প্রায় ৫০%সংবাদই আজ মারাত্মক সামাজিক অধ:পতনের।সর্বত্রই আজ বিরাজ করছে অশান্তি।অরাজকতা, রক্তপাত, খুন – খারাবি,চুরি, ছিনতাই,রাহাজানি, ধর্ষন, নারী নির্যাতন,যিনা -ব্যভিচার, অত্যাচার, অনাচার, কুটিলতা ও জটিলতা মানব জীবনের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।যেগুলো প্রতিনিয়তই সমাজ ব্যবস্থাপনাকে অবলীলায় পঙ্গুতে পরিণত করছে।

বিশেষতঃসাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অপসংস্কৃতির করাল গ্রাসে যুব সমাজ অঙ্কুরেই বিনাশ হচ্ছে।
অশ্লীল ইউটিউব চ্যানেল,জি – সিনেমা,জি -বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস,কুরুচিপূর্ণ ভিডিও,সি আই ডি ইত্যাদি চ্যানেল গুলোর প্রচারিত অনুষ্ঠান মালা কখনো দেখার মত নয়।

নাটক অভিনয়ে বউ- শাশুড়ীর দ্বন্দ্ব, দেবর- ভাবীর অবৈধ সম্পর্ক, আত্মীয় -স্বজনের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ,হিংসা, দ্বেষ -বিদ্বেষ সহ সকল অপচ্ছায়ার চর্চা শিখানো হয় মেকি আবরণের চোখ ধাঁধানো কূট কৌশলে।

মোদ্দা কথা, মহত্তম চারিত্রিক অধ:পতন,ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের সুন্দর, শান্ত, সুশৃঙ্খল ও সুচারু সমাজ জীবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

নৈতিক মূল্যবোধের স্বরুপঃ ধর্মীয় বিশ্বাস, সুষ্ঠু চিন্তা -চেতনা, সুন্দর আচার -আচরণ, পালনীয় নিয়ম -নীতি ও গ্রহণীয় প্রথা মেনে চলা। এবং সব ধরনের অর্জিত মানবীয় গুণাবলীকে এক কথায় নৈতিক মূল্যবোধ বলে।

মূল্যবোধের অবক্ষয়ঃঅবক্ষয়ের আক্ষরিক অর্থ হল ক্ষয় হয়ে যাওয়া, লুপ্ত বা হ্রাস পাওয়া।
নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বলতে মানুষের অর্জিত সুন্দর, আদর্শ ও মানবিক গুণাবলী মানব চরিত্র থেকে বিলুপ্ত হওয়াকে বুঝায়।

নৈতিকতা অবক্ষয়ের মূল কারণঃ
ধর্মহীনতা অভিভাবকত্বহীনতা, সামাজিক অসচেতনতা,অসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক অশ্রদ্ধাবোধ, সুশিক্ষার অভাব ও সর্বগ্রাসী আকাশ সংস্কৃতির অশ্লীলতার সয়লাব।

জাতির চরম বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণের উপায়ঃ
০১.ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।যেহেতু ধর্মই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার প্রধান পীঠস্থান। নীতিবোধ শিক্ষা সহ যাবতীয় অনিন্দ্য ও চারিত্রিক দীক্ষা ধর্মের মাধ্যমে আমরা সহজেই পেয়ে থাকি। যার ভিতরে ধর্মীয় ও মৌলিক জ্ঞান থাকে, সে কখনো অন্যায় কাজ করতে পারে না। ধর্মই মানুষকে আদর্শিক চেতনায় উন্নীত করে তোলে।

০২.সন্তানের জন্য সু-শিক্ষা নিশ্চিত করাঃ
সুশিক্ষা ব্যক্তিকে অজ্ঞাতর ঘোর অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। মানুষের জীবনকে সুন্দর, সাবলীল, সমৃদ্ধ ও আলোকিত করে। এবং পরস্পর শালীনতা ও শ্রদ্ধাবোধকে খুব সুন্দরভাবে মানব হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে। একজন সুশিক্ষায় দীক্ষিত মানুষ সৎ,আদর্শ, সচ্চরিত্রবান,আল্লাহ ভীরু,দেশ প্রেমিক ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠে।

সুশিক্ষার যথার্থ পরিচর্যার ফলে মানুষ অপরকে প্রীতি -ভালবাসা,স্নেহ, মায়া, মমতা ও হৃদ্যতার মেলবন্ধনে খুব সহজে আগলে রাখতে শিখে।

তাছাড়া নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা মানুষকে ন্যায় ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। উদ্দীপ্ত করে শান্ত, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবন বিন্যাসে।

০৩.অভিভাবকদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি সহ সন্তানদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা।

০৪.ঘুণে ধরা পঁচা দুর্গন্ধময় পাশ্চাত্যের ধোঁয়াশাচ্ছন্ন অপসংস্কৃতি পরিত্যাগ করা।

০৫.তথ্য প্রযুক্তি ও অনলাইনের অপব্যবহার রোধ করে তার সুনিয়ন্ত্রিত পন্থা নিশ্চিত করা।

০৬ আকাশ সংস্কৃতিকে সুষ্ঠু ও সামাজিক ধারায় নিয়ন্ত্রণ কল্পে এফ ডি সিকে ঢেলে সাজানো।

০৭.চলনে, বলনে, আচার -আচরণে আল্লাহ ভীতি ও শালীনতা পূর্ণ জীবনে অভ্যস্ত করা।

০৮.পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা।মূলত: নৈতিক শিক্ষার প্রথম ও প্রধান ধাপ হল পরিবার। সাধারণত প্রতিটি সন্তান স্ব-গৃহ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশে অবস্থান করে সূচনা লগ্ন থেকে মূল্যবোধের মহান শিক্ষা অর্জন করে থাকে। তাই পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।

সর্বোপরি নৈতিক মূল্যবোধ, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান থেকে সকল পর্যায়ে মানবতাবোধ ও সহযোগিতার সর্বোত্তম আদর্শ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হলে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন থেকে যাবতীয় পাপ -পঙ্কিলতা ও সংকীর্ণ মানসিকতাবোধ ক্রমশ হ্রাস পাবে। ফলে আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবে। ইনশাআল্লাহ।

আবুল কাসেম আশরাফ
সহকারী শিক্ষক
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, কক্সবাজার।