নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মহেশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথ তৈরি করতে কোহেলিয়া নদী ভরাট করে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে তিন সচিব, নদী কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ ১৫ জনকে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)।
সংগঠন দু’টির পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি সাঈদ আহমেদ কবির ২৬ জানুয়ারী ডাকযোগে এ নোটিশটি পাঠিয়েছেন।
নোটিশে ইতিমধ্যে নদীর ভরাটকৃত অংশ থেকে মাটি ও সকল অবকাঠামো সরিয়ে নিয়ে নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একই সাথে প্রাথমিক প্রবাহ ও সিএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে পুনরায় নদী বিরোধী সকল কার্যক্রম এবং প্রতিবেশ কংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা পূর্বক “প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা” হিসাবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবী জানানো হয়েছে।
নোটিশ প্রেরণের সাত দিনের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ এ আইনজীবির কাছে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন অন্যথায় নোটিশ প্রাপ্ত ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন।
নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন, ভুমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক , পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্রগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
নোটিশে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া থেকে শুরু হয়ে নদীটি মহেশখালীর মাতারবাড়ি হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। মাতারবাড়ি, কালামারছড়াও ধলঘাট এ তিন ইউনিয়নের জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিশে আছে নদীটি। মহেশখালীর বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহণ ও যাতায়াত মুলত এ নদীর মাধ্যেমেই হয়ে থাকে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২৫ জানুয়ারী দেওয়া নোটিশ অনুযায়ী, মহেশখালী- মাতারবাড়ী এলাকায় রাজঘাট সংলগ্ন কুহেলিয়া নদীর পাড় ঘেষে রাজঘাট ব্রীজ থেকে মোহিরাঘোনা পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়ী বাঁধ কাম সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্যে কুহেলিয়া নদী ভরাট করা হয়। এ নদী ভরাট ও রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত জাতীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথ তৈরি করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী ভরাট করে নির্মাণ করছে সড়ক । নদীর পূর্ব অংশ থেকে তোলা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে নদীর পশ্চিম অংশ। প্রায় দুই কিলোমিটার ভরাট করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে নদীর অস্থিত্ব। আরও সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এভাবে ভরাট করে তৈরি করা হবে চার লেনের সড়ক। ক্রমাগত ভরাট করার কারণে নদীর বুকে জমেছে পলি ও চর। তাতে আটকে যাচ্ছে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌকা। নদী সংকুচিত হয়ে পরিণত হয়েছে একটি মৃত প্রায় খালে। থেমে গেছে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নৌ-যোগাযোগও।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, নদী দখল ও ভরাট কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনী বিধি-নিষেধ ও জনস্বার্থ বিবেচনায় কুহেলিয়া নদী যথাযথ সংরক্ষণ না করা আইন বাস্তবায়ন/প্রয়োগকারী সংস্থা হিসাবে নোটিশ প্রাপ্তদের ব্যর্থতার পরিচায়ক।