রামু প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগরে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের ৩ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন, রশিদনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নজিবুল আলম, ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম এবং ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মিজানুল করিম। এদের মধ্যে নজিবুল আলম ও সাইফুল ইসলামকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাতেই কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের পানিরছড়া মামুন মিয়ার বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন-রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এ হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা ও রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএ আজমিরুজ্জামান খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান। ওসি কেএ আজমিরুজ্জামান জানিয়েছেন-এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। বর্তমানে এখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন-এ ঘটনায় যারাই অভিযুক্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

হামলায় গুরুতর আহত নজিবুল আলমের বাবা বাদশা মিয়া ও ভাই শাহ আলম জানিয়েছেন- সন্ধ্যায় নজিবুল আলম ও সাইফুল ইসলাম পানিরছড়া মামুন মিয়ার বাজার জামে মসজিদের পাশে একটি চায়ের দোকানে অবস্থান করছিলো। এসময় চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার সহযোগী আবুল কাশেম, রমজান আলী, ফয়সালের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অস্ত্র, দা, কিরিচ নিয়ে আকষ্মিকভাবে তাদের উপর হামলা শুরু করে। হামলাকারিদের দা এর কোপে নজিবুল আলমের ডান হাত, সাইফুল ইসলামের মাথা ও হাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এসময় হামলাকারিরা বাজারের অপরপ্রান্তে স্বাদ রেষ্টুরেন্টের সামনে গিয়ে সেখানে থাকা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মিজানুল করিমকেও কুপিয়ে আহত করে।

বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, এসময় জনতা খবর দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পৌনে ১ ঘন্টা পর। ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা সবাইকে কুপিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত সাইফুল ইসলামের পিতা শামসুল আলম জানিয়েছেন-চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

রশিদনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও ইউপি ম্বেম্বার বজল আহমদ জানিয়েছেন- আহতরা সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করে অনিয়ম-দূর্ণীতি, ত্রাণসামগ্রী লুটপাট, পাহাড় নিধন, বনাঞ্চল উজাড় সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এরই প্রতিবাদে সাম্প্রতিক সময়ে আহত ৩ নেতাকর্মী, পরিষদের অধিকাংশ মেম্বার সহ এলাকাবাসী মানববন্ধন, সমাবেশ ও অন্যান্র প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এরই জের ধরে চেয়ারম্যান বিভিন্নসময়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলো এবং সর্বশেষ শাহ আলম চেয়ারম্যান নিজে অস্ত্র ও দা নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন-শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) এলাকায় একটি ফুটবল ম্যাচে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে চেয়ারম্যান শাহ আলম বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালান। কিন্তু একটি দল ও তাদের সমর্থকরা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত না মেনে উল্টো গালিগালাজ করে মাঠ ত্যাগ করে। ওইদিন চেয়ারম্যানকে নাজেহাল করায় ক্ষুব্দ হন চেয়ারম্যানের লোকজন। এ ঘটনার জের ধরেই এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে চেয়ারম্যানের সমর্থক লোকজন।

রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যরান এমডি শাহ আলম জানিয়েছেন-হামলায় তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। শুক্রবার তাঁর শাশুড়ি স্ট্রোক করেছে। ঘটনার সময় তিনি শাশুড়িকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন। চেয়ারম্যান শাহ আলম আরো জানান- ফুটবল খেলায়  বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি দূঃখজনক। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি ‘এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য’ ওসিকে ফোন করেছেন বলেও জানান।

এদিকে ভূক্তভোগী এবং একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একসময় ভূমিহীন হিসেবে পরিচয় দিলেও চেয়ারম্যান শাহ আলম এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সরকারি জমি দখল, বনের গাছ উজাড়, নির্বিচারে পাহাড় নিধন, সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎ সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে বর্তমানে এলাকায় ত্রাসের  রাজত্ব কায়েম করেছে।

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন-বর্তমানে এ ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বিএনপি আমলের চেয়ে বেশী নির্যাতিত ও অসহায় হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যান শাহ আলমের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর চলে বর্বরোচিত হামলা। চেয়ারম্যান শাহ আলম একসময় বিএনপির সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজলের সহযোগি ছিলেন এবং রশিদনগর এলাকায় ওই বিএনপি নেতার মালিকানধিন নিরিবিলি রাবার বাগান দেখাশোনা করতেন।

নেতাকর্মীরা আরো জানান- ইতিপূর্বে শাহ আলম চেয়ারম্যান ও তার লালিত সন্ত্রাসীদের হাতে হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন হাজারো মানুষ। কয়েকবছর পূর্বে হামলার শিকার হন আওয়ামীলীগ নেতা কাবুল, রশিদনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি বজল আহমদ বাবুল, ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হক সহ অসংখ্য নেতাকর্মী।