আলমগীর মাহমুদ

মাথিনের প্রেম আজো কাঁপায়। প্রেমিক প্রবরকে। সে বিচ্ছেদের বিরহেই পুলিশ অফিসার ধীরাজ ভট্টাচার্য বনেন লেখক। লিখেন “যখন আমি পুলিশ ছিলাম ” বইটি।পরে এ কাহিনী স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি হয়। কাঁদায় অগুনতি মানব হৃদয়।

টেকনাফ থানার সামনে ‘মাথিনের কূপ ‘ আজো আছে মাথিন–ধীরাজের অমর প্রেমকাহিনীর রাজসাক্ষী হয়ে।

সেন্টমার্টিনের আবদুর রশিদ মাষ্টার মিনারার প্রেমের বিচ্ছেদে রচনা করে অন্য আর এক ইতিহাস। তাও টেকনাফ।

বিচ্ছেদে স্বস্তির অন্বেষায় হাতে নেয় বাদ্য -যন্ত্র।মনের শোকে গাইতে রয় নিজ ভাষায় যাহ আসে তাহ। সেন্টমার্টিনের চরে চরে। একসময় টুরিস্টদের মনোরঞ্জনে গাইতে রয়।গান শুনে লিখেও নিয়ে যেত টুরিস্টেরা। যাহ বখশিশ জোটে তাতেই ছিল রুটি রুজি। যন্ত্র- গান কোনটির সাথে ছিল না চেনাজানা। বিচ্ছেদেই আপণ বনে তাঁরা।

সে অখ্যাত আবদুর রশিদ মাষ্টারের গাওয়া গানটি চাটগাঁইয়া গায়ক সন্ধিপন গেয়ে বেশ বাহবায়।সে সময়ই উনি জানায় এই গান সেন্টমার্টিনের আবদুর রশিদ মাষ্টারের।

c-plus T.v. খোঁজে বের করে। দৃষ্টি সীমানায় আনেন এই অখ্যাতকে। পৃথিবীবাসী দেখে সে প্রাণের গানের আসল শিল্পীকে।তাঁর শিল্পী জীবন বিরহেরই উপহার। বিচ্ছেদ কাতরতায় শৈল্পিক প্রকাশ। যাহ আজ আমাদের গর্বঃ–

মধু হই হই আঁরে বিষ খাবাইলা
কঁ-ন কারনে ভালবাসার দাম ন দিলা!
ক- ন দোষখান পাই ভালবাসার মূল্য ন দিলা!
দরদের সাইগরে দরদের মানুষকে অভিমানী প্রশ্ন!

আসা আছিল তোঁয়ারে লই,
বাইন্ধুম একখান সুখের ঘর!
সুখের বদলে ক্যঁন দুঃখ দিলা!

প্রেম নদীতে অউনর টালত(আগুনের কূঁয়ায়)
আঁরে ক্যঁনে ফেলাই গেলা!
এঁন গরি ক্যঁন ভুল বুঝিলা!
মিড়া হই হই ক্যঁন তিতা খাবাইলা!

রশীদ ভাইয়ের মনের আশা
জ্বালিপুরি ক্যঁন ছারখার গইল্যা!
প্রেম গরি ক্যন বেঈমানী গইরল্যা!

সুখের ঘরের ফ্রিজের শীতলে রাজা রানী হব, ছিলাম ভাবনায়, আগুনের চুলায় কেমনে আমারে রেখে গেলা! কেমনে এমন ভুল বুঝিলা! রশীদ ভাইয়ের মনের আশা জ্বালিয়ে কেমনে ছারখার করলা।

প্রত্যেক লাইনেই মণের দরদ মাখানো বিরহী প্রশ্ন! যে গান চাটগাঁইয়া নয় এমন মানুষের কাছেও পেয়েছে কদর। গানের কলির জন্যও চাটগাঁইয়া নয় এমন অনেকে আজ এই ডাইলেক্টগুলো বুঝে।

(২) বাইন দুয়ারতিন নো আইস্য তুঁই
নিশির অ কালে
মা বাপরে লাগাই দিব কিয়া দেখিলে।
…….
তুঁই হইলা সোনার পিঞ্জর ময়না পাখি আঁই
মনে কয় দিনে রাইতে তোঁয়ার ভিতর থাই।

সামাজিক বাধানিষেধের জমানায় প্রেমিক বিরহ বেদনায় পরানের মানুষকে দেখতে নিশিকালে চুরি করে আসত পাকঘরের দরজায়। অপেক্ষায় রইত।

রান্নার কাজে ব্যস্ত মা। মা’র ধোয়া মুছার আঁইড়াপানি( রান্নার কাজের ময়লাপানি) ফেলতে কবে বের হবে মোর হৃদয় রাণী।

সে সময় প্রেমিক প্রবরকে সতর্ক করছে প্রেমিকা। নিশিকালে আসবা না, ও আমার পরাণের ধন। কেউ যদি দেখে ফেলে মা বাবারে নালিশ করবে।

তুমি হইলা সোনার পিঞ্জর, ময়না পাখি আমি।সারাক্ষন মন চায় ময়না পাখি যেভাবে পিঞ্জরে রয় ঐভাবে দিনে রাতে তোমার ভেতর থাকি…

(৩)
বউঃ –

তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু
মাছ মারিবার লায়।
তোঁয়ারে ছাড়া খাইল্যা ঘরত
ক্যঁনে থাইক্যম আঁই…!

জামাইঃ—দুই এক্যান দিন রাইখ্য কইন্যা তুঁই
মনরে বুঝাই
শাড়ী চুলি কাঁনর বালি কিনি দিয়ুম আঁই..
বউঃ— ন লাগিব শাড়ী চুলি,ন লাগিব কাঁনর বালি
যদি আঁই তোঁয়ারে পাই!

# জিষ্ট#
এই গানটিতে জেলে জেলেনির বিরহের করুণ আভা!

বউঃ—
তুমি সোনাদিয়া দ্বীপে মাছ মারতে যাইবা তোমারে ছাড়া এই খালি ঘরে কেমনে রইবো !

জামাইঃ— কইন্যা! দুই একটা দিন মনরে বুঝিয়ে ধৈর্য ধরাইয়ে রাইখ্যো…ওখান থেকে এসেই, তোমারে শাড়ি,চুলি,কাঁনের বালি কিনে দেব।

মাছ মারতে গেলেই বিক্রিতে টাকা আসবে, সে টাকায় হবে কেনাকাটা। তোমার হউসের ( চাওয়ার/পছন্দের) জিনিস সব কিনে দিব। উপহারে বিরহ জয়ের কৌশল।

‘বউ’
শাড়ী চুলি লাগবে না। লাগবে না কানের বালিও
যদি আমি তোমারে পাই…..

তুমি আমার আদরের ধন,তুমি আমার জীবন মরণ
রসর কালে না যাইও ফেলাই!!

……….তোমারে চাই…! শুধুই তোমারে! …চাটগাঁইয়ারা শুধুই তোমারে চায়..!!.

লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ কক্সবাজার। alamgir83cox@gmail. com