মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু :
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের নতুুন তিতার পাড়া গ্রামের ৭ নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর গত সোমবার (১১ জানুয়ায়ি) রাতে ইয়াবা পাচারকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে । এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।
শনিবার (১৬ জানুয়ারী)সকাল ৯ টার দিকে স্থানীয় নতুন তিতার পাড়া এলাকায় কয়েক শ নারী-পুরুষ কচ্ছপিয়ার ঐতিহাসিক শাহ-সুজা সড়ক ও গর্জনিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। নতুন তিতার পাড়া ইসলামী আদর্শ তরুন সংস্থা, আদর্শ যুব প্রগতি সংঘ, বাইতুনুর জামে মসজিদ ও আল-হেরা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি এবং প্রতিবাদী জনতা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে করা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল উত্তর প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, ইয়াবা পাচারের বিষয়কে কেন্দ্র করে বদিয়া ও তার সহযোগীরা নিরপরাধ লোকজনের ওপর রাতে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়ে ৭ ব্যক্তিকে গুরুতর আহত করেন। আমরা ঘটনার সুস্থ তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাছি। এছাড়াও বক্তারা অভিযোগ করেন, হামলার সময় ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার আনছারি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রতিবাদকারীরা ইয়াবা পাচারে জড়িত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কচ্ছপিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব ইদ্রীস সিকদার,ওয়ার্ড মেম্বার নরুল আলম সিকদার, কৃষকলীগ সভাপতি ও সম্ভাব্য মেম্বার প্রর্থী হানিফ ভুট্টো, বেলাল সিকদার,বাইতুন নুর জামে মসজিদের সভাপতি মমতাজুল ইসলাম,আল-হেরা জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম,সমাজ সেবক নুরুল আলম, আবু তালেব, মাওলানা মাহমুদুল হক, মাওলানা মোঃ রফিক আহাম্মদ,মোস্তাক আহাম্মদ,মোঃ কালুসহ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ১১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বড় জামছড়ি খালের পশ্চিম কুল গ্রামের ইয়াবা ব্যবসায়ী সব্বির আহাম্মদ (ওরপে বদিয়া), তার ভাই জাফর,মনজুর ও জাংছড়ি নতুন পাড়া মনিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ জন সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বেলাল হোসেন, মিজানুর রহমান, জহির উদ্দিন কালু,,জুহুরা বেগম, রিয়াজুল মান্নান, আবছার কামাল ও রেজাউল করিমকে আহত করে। এর মধ্যে গুরুতর আহত মিজান ও বেলালকে ওই রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জহির উদ্দিন কালু, জুহুরা বেগম, রিয়াজুল মান্নান,আবছার কামাল কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং রেজাউল করিম নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলেন, নতুন তিতার পাড়াস্থ কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক শাহ-সুজা সড়ক দিয়ে সাব্বির আহাম্মদ ওরপে বদিয়া,তার ভাই জাফর আহাম্মদ ও শহিদুল্লাহ ওরপে সোনামিয়া, আবদুল গাফাররী ওরপে মনিয়ার নেতৃত্বে ১২ লক্ষ টাকার ইয়াবার চালান পাচার হবে এমন খবর পান নতুন তিতার পাড়ার ইয়াবা সেবন কারী মন্নি ও বাবুল। ঐদিন মাগরিবের পর করিম ১৩ নামের একটি সিএনজি যাওয়ার সময় থামালে ঘটনা স্থলে বদিয়ার সাথে হাতা হাতি হয় মন্নির। এর পর সিএনজি গাড়িটি নিয়ে বদিয়া, সোনা মিয়া, আনছারী মেম্বারের ভাই মনিয়া ঐ গাড়ি নিয়ে উল্টো পথে ইয়াবা গুলো নিয়ে যায়। এর পর রাত ১০ টায় ইয়াবা পাচারের বিষয়টি ফাঁস হবে তাই সংঘবদ্ধ হয়ে ইয়াবা পাচারকারী বদিয়া ও মনিয়ার কথামত ৩০-৩৫ জনের একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসহ আনছারী মেম্বারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। এরপর মেম্বার আনছারী ফোন করে ডাকেন মন্নির মামাদের। এসময় ঘটনাস্থলে বেলাল, রিয়াজু, আবছার ও জুহুরা আসলে তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করলে তারা আহত হয়ে মাঠিতে পড়ে যায়। এসময় তাদের উদ্ধার করতে আসা মিজান ও জহির উদ্দিন কালুকেও মেরে রাস্তায় ফেলে রাখেন। তখন মেম্বার আনছারি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এলাকাবাসী জানান, ১২ জানুয়ারী ভোর ৭ টায় নতুন তিতার পাড়ার একটি সংগঠন টেকনাফে পিকনিকে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এর আগের রাতে তারা হামলার শিকার হয়ে যাওয়া হল না পিকনিকে।

ঘটনার সাথে অভিযুক্ত আনছারি মেম্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘হামলাকারীরা কেউ আমার কথা শোনেনি।’ তবে তিনি প্রথমে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য চেষ্টা করে ছিলেন বলে জানান।

গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরহাদ আলী বলেন, খবর পেয়ে ঐদিন রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। বর্তমানে এ ঘটনায় নামে বেনামে ২৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ায় মাদক পাচারকারী ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত কাউকে ছাড় দেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন