ইমাম খাইর, সিবিএন:
আবদুর রহমান বদি আমার পিতা। তাই পিতৃত্ব দাবি করে ‘ডিক্লারেশন’ আইনে মামলা করেছি। তার নিকট আমার সহায় সম্পদের চাওয়া নাই। তিনি আমাকে আইনগতভাবে পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন, সেটাই আমার দাবি। আর কিচ্ছুই চাই না। তিনি মেনে নিলেই তো হয়। আমার বাবা সত্যটাই স্বীকার করবেন, আশা করছি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকে এমন কথাই বলেছেন আবদুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে করা মামলার বাদি মোহাম্মদ ইসহাক। এদিন মামলার ধার্য তারিখ ছিল।
সর্বশেষ চাওয়া কি এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আমার চাওয়া একটাই, একটা সঠিক বিচার। আবদুর রহমান বদি আমার বাবা।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত বদির বিরুদ্ধে মামলা করেন টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ার ২৭ বছর বয়সী যুবক মোহাম্মদ ইসহাক।
মামলায় বদি ছাড়াও মূল-বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা টেকনাফের পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে। ওইদিন মামলাটি আমলে নিয়ে মূল-বিবাদী আব্দুর রহমান বদিসহ বিবাদীদের ১৪ জানুয়াারী স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।
আব্দুর রহমান বদি কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য।
এদিকে, আব্দুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে দায়েরকৃত মামলায় জারি করা সমনের চিঠি আদালতে ফেরত না আসায় শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি; এমনকি মামলার মূল আসামী বদি আদালতে হাজিরা দেন নি, তাই উপস্থিত ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১ টায় এ তথ্য জানান মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী।
এদিকে মামলা দায়েরের পর নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাদি মোহাম্মদ ইসহাক।
তিনি বলেন, ওসমান সরওয়ার সাহেব আমার মামলা ড্রাফট করে দিয়েছিলেন। আমার বাবাকে একটু ভয় পান। তাই প্রকাশ্যে আইনি সহায়তা দিতে চচ্ছেন না। শেষ পর্যায়ে নাজিম উদ্দিন, কাফিল উদ্দিন সাহেবকে বললাম। তারা আইকে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী জানান, মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক ইস্যু করা সমনপত্র এখনো ফেরত আসেনি। তাই মামলার নির্ধারিত দিনে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। যেহেতু সমনপত্র ফেরত আসেনি সেহেতু আসামী সময় পেয়েছেন।
জারি করা সমনপত্র ফেরত আসার পর আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন বাদীপক্ষের এ আইনজীবী।
১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ার বাসিন্দা আবুল বশরের মেয়ে সুফিয়া খাতুনকে সাবেক সংসদ সদস্য বদি বিয়ে করেন বলে মামলার বাদী ইসহাক দাবি করেন। বাদী সেই সূত্রে আব্দুর রহমান বদির প্রথম ছেলে সন্তান।
দাবিমতে, তার মা সুফিয়া খাতুনকে কলেমা পড়ে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। বদির বাবার হোটেলে কর্মরত মৌলভী আব্দুস সালাম তাদের বিয়ে পড়ান। হোটেলের দারোয়ান এখলাস মিয়াসহ আরও তিন-চারজন বিয়েতে সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু বদির বাবা এজাহার মিয়া কোম্পানী এ বিয়ে মেনে নেননি। পরে জোর করে তাদের বাড়ির মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে তার মাকে ১৯৯৪ সালের ৪ এপ্রিল দ্বিতীয় বিয়ে দেন। এ বিয়েও পড়ান মৌলভী আব্দুস সালাম। মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে তার মায়ের বিয়ের পাঁচ মাস পর ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তার জন্ম হয়। তার জন্ম নিবন্ধন সনদে পিতার নাম মোহাম্মদ ইসলাম উল্লেখ করা হয়েছে। কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে সম্মানসহ স্নাতক পাশ করেছেন ইসহাক। এখন মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন।
পিতার নাম আবদুর রহমান বদি উল্লেখ করে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য টেকনাফ পৌরসভায় আবেদন করেছিলেন মোহাম্মদ ইসহাক। তখন বদির চাচা মেয়রের দায়িত্বে থাকায় তাকে সনদ দেননি। পরে বাধ্য হয়ে ২০১১ সালের জুনে পিতার নাম মোহাম্মদ ইসলাম উল্লেখ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেন।