প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
জলবায়ু সংকট নিরসনে খুব শীঘ্রই ‘ক্লাইমেট ক্লাব বাংলাদেশ’ নামে একটি টেকসই উদ্যোগ গ্রহন করতে যাচ্ছে ‘ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ’। লেখাপড়ার পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাবটি জলবায়ু পরিবর্তনভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন করবে। সর্বোপরী এসডিজি অর্জনেও ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী। দিন যত গড়াচ্ছে আমরা ততই ডিজিটাল হচ্ছি। যার কারণে আমরা এখন বিভিন্ন ধরণের মৌলিক কার্যক্রম থেকেও দূরে চলে যাচ্ছি। তার মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ক্লাবগুলো যা একসময় বেশ চালু ছিল। তার মধ্যে জলবায়ু ক্লাব একেবারে নেই বললেও চলে এবং এই সম্পর্কে খুব একটা জানা নেই কারো।

“ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ” জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত। জানা যায়, এ সংগঠনে কাজ করে যাচ্ছে একদল মেধাবী তরুণ-তরুণী, যারা বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্র-ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা একটি নিরাপদ-বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায়।

জলবায়ু ক্লাব নিয়ে সংগঠনের সদস্যদের সাথে একটি আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ জাবেদ নূর শান্ত মূলত বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জানতে চাওয়ার আগ্রহ কে কাজ করতে চাওয়ার ইচ্ছায় পরিণত করতে মূলত এই উদ্যোগটি হাতে নিয়েছেন। উপকূলের তরুণরা এ বিষয়ে তেমন একটা জানে না যদিও তারা একটু বেশীই ভুক্তভোগী। এই ক্লাব সবসময় তাদের পাশে থাকবে।

এ বিষয়ে ‘ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা জলবায়ুযোদ্ধা জাবেদ নূর শান্ত বলেন, পরিবেশ, জীব-বৈচিত্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলে কোন তরুণ আর ঘরে বসে থাকবে না। অন্তত নিজেকে বাঁচাতে হলে একজন তরুণ জলবায়ু সংকট মেকাবিলায় মাঠে ঝাপিয়ে পড়বে। একজন জলবায়ুকর্মী হিসেবে প্যারিস চুক্তির গুরুত্ব বেশ ভালভাবেই জানি। পাঁচ বছর পরেও প্যারিস চুক্তির কার্যক্রম তেমন একটা দেখতে পাইনি। কার্বণ নিঃসরণ এর হার কমছেই না, বরং বিশ্বনেতারা প্যারিস চুক্তির শর্তভঙ্গ করেছেন বারবার। যদিও আমরা তরুণরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। অন্তত বাংলাদেশের তরুণদের জানা উচিত প্যারিস চুক্তিকেও হার মানাতে পারে বাংলাদেশ এর কার্বণ নিঃসরণের হার। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারি, জীবাশ্ম জ্বালানীর কারণে ২০৪০সাল নাগাদ বাংলাদেশে কার্বণ নিঃসরণ এর হার ৪° সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে প্যারিস চুক্তিতে ২০৫০সাল নাগাদ কার্বণ নিঃসরণ এর হার ১.৫°সেলসিয়াস পর্যন্ত কমিয়ে আনায় অঙ্গীকারবদ্ধ বিশ্বনেতারা!

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় সময় সমস্যা নিয়েই আলোচনা করি কিন্তু কখনো সমাধান নিয়ে তেমন একটা ভাবিনা। তরুণরা এখন অনেকটা সচেতন। আমার বিশ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তরুণরা এখন বেশ ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতে পারছে না কিংবা জানার মত সেই সুযেগটুকু তারা পাচ্ছে না। ফলে কাজ করতে আগ্রহীরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে। জলবায়ু ক্লাবের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা জলবায়ু পরিবর্তনভিত্তিক যেকোন বিষয়ে জানতে পারবে এবং এ সংকট মোকাবিলায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ তথা শীতল পৃথিবী দেখতে পাব বলে আমি আশাবাদী।

উন্নত দেশগুলোতে অতিমাত্রায় কার্বণ নিঃসরণ এর ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ অনেক দেশে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পানির গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এবং কোটি কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। ভোলা, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা সহ বাংলাদেশ এর বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এ বিষয়গুলো অনেকে জানেও না। সুতরাং, ‘ক্লাইমেট ক্লাব বাংলাদেশ’ এর মাধ্যমে জলবায়ু জ্ঞান আহরণ করার জন্য বড় একটি সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছে। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি এই ক্লাবের হয়ে কাজ করলে অনেক তরুণরাই জলবায়ু সংকট নিরসনে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে। নেতৃত্বে দক্ষতা অর্জনের ফলে তরুণরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজেদের অংশগ্রণ নিশ্চিত করতে পারবে বলে আশাবাদী এবং এ সমস্যার সমাধান নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সরাসরি কাজ করার সুযোগ কে দেশের জন্য বিরাট একটি সহযোগিতায় পরিণত করে সর্বোপরী দেশের জন্য কিছু করে যেতে পারবে।

‘ক্লাইমেট ক্লাব বাংলাদেশ’ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রায় বেশ কিছু চমক নিয়ে আসতে পারে ‘ক্লাইমেট জাসটিস বাংলাদেশ’। কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ক্লাবটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন অত্র বিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন ছাত্র মিনহাজ আরফান মিশুক। মিনহাজ বর্তমানে কক্সবাজার সরকারি কলেজে ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্র।

মিনহাজ বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউট করে বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে স্কুলের জন্য পরপর দু’বার ১ম পুরস্কার এনেছি। এখন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কাজ করা সুযোগ পেয়ে মনে হচ্ছে শুধু আমার দেশ নয়, পুরো পৃথিবীর জন্য কিছু করতে পারছি। চেষ্টা করব, সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করতে এবং সকলে একইসাথে যেন এ সংকট মোকাবিলা করতে পারি।

এছাড়াও নারী জলবায়ুকর্মী সাবরিনা প্রিয়া এবং তাসকিয়া শাম্মী বলেন, ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও সমানভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো একজন নারীকেও ভুক্তভোগী করে অনায়াসে যা আমরা সহজে বুঝতে পারিনা। সমাজের ক্রান্তিকালে সকলে একসাথে কাজ করলে সবধরণের বাঁধা আমরা অতিক্রম করতে সক্ষম হব।