এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া পৌরশহরের পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সামাজিক অপরাধ, শহরকে যানজটমুক্ত রাখা, চুরি-ছিনতাই রোধসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য একবছর আগে বসানো হয় অন্তত শতাধিক ক্লোজড সার্কিট (সিসি ক্যামরা) ক্যামরা। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অনুদানে এসব সিসি ক্যামরা বসানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েকমাসের মাথায় বসানো বেশিরভাগ সিসি ক্যামরা অচল হয়ে গেছে। ফলে চকরিয়া পৌরশহরে নিবিঘেœ বেড়ে চলছে নানাধরণের অপরাধপ্রবণতা। দৃশ্যত, সিসি ক্যামেরাসমুহ অচল থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধকর্মে জড়িতদের সহজে সনাক্ত করতে পারছেনা। এই অবস্থার কারণে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরী হয়েছে পৌরশহরের ব্যবসায়ী, পথচারীসহ সর্বমহলে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষদিকে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চকরিয়া পৌরশহরকে অপরাধ ও যানজটমুক্ত রাখার জন্য সিসি ক্যামরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই কর্মকান্ড বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান। উপজেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সহায়তা করেন চকরিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সমাজের ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পৌরশহরের জমজম হাসপাতাল থেকে শহীদ আবদুল হামিদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এবং পৌরশহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে স্থাপন করা হয় অন্তত শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামরা। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

চিরিংগা বাসস্টেশনের পুলিশ বক্স স্থাপিত ছয়টি মনিটরের মাধ্যমে এসব সিসি ক্যামরা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়। এসব সিসি ক্যামরার সার্বিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, চকরিয়া থানা ও হাইওয়ে পুলিশ এবং বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো। এসব সিসি ক্যামরা বসানোর প্রথমদিকে ঠিক মতো নজরদারি থাকলেও দুই মাস পর থেকে কার্যায়ক্রমে ভাটা পড়ে। এতে অধিকাংশ ক্যামরা নষ্ট ও চুরি হয়ে যায়।

সরজমিনে দেখা গেছে, পৌরশহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা ক্লোজড সার্কিট ক্যামরা (সিসি ক্যামরা) নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু ক্যামরা চুরি হয়ে গেছে। এরমধ্যে বেশরিভাগ ক্যামরার মুখ ভিন্ন দিকে তাক করা রয়েছে। কিছু ক্যামরা আকাশের দিকে, আবার কিছু ক্যামরা মাটির দিকে মুখ করে আছে। ক্যামরাগুলোর লক্ষ্যবস্তু ঠিক নেই বললেই চলে। আর চিরিংগা পুলিশ বক্সে বসানো মনিটরও বন্ধ রয়েছে। যার কারণে পৌরশহরে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, যানজটসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে গেছে।

চকরিয়া পৌরসভার সচিব মাসউদ মোর্শেদ বলেন, পৌরশহরকে যানজট ও অপরাধমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে পৌর প্রশাসনও সম্মতি প্রদান করে। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ লাখ টাকার ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই ফান্ডে পৌরসভা ২ লাখ টাকা দেয়। এছাড়া পৌরশহরের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কয়েকজন ধর্নাঢ্য ব্যক্তি থেকে আরও ৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দেয়া হয়। বাকি টাকা উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা করেছে।

এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, আমি ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পর করোনার কারণে লকডাউনে ছিলো। এরমধ্যে সিসি ক্যামরা গুলো সচল করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ৬০টির অধিক সিসি ক্যামরা নষ্ট হয়ে গেছে। এসব মেরামতের জন্য কাজ চলছে। শীঘ্রই সিসি ক্যামরার কাজ শেষ করে মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভাকে দায়িত্ব দেয়া হবে।