সিবিএন ডেস্ক:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। যদিও ফেসবুকে প্রচার হওয়া বিজ্ঞাপন ও বুস্টিংয়ে দেশের মানুষ যে অর্থ ব্যয় করছে তার বড় একটি অংশ থেকে এখন সরকার রাজস্ব পাচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে ফেসবুক তাদের অথরাইজড সেলস পার্টনার নিয়োগ দিয়েছে। এইচটিটিপুল নামের ওই প্রতিষ্ঠানের যারা ক্লায়েন্ট, তারা দেশীয় টাকায় তাদের বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য খরচের বিল দিতে পারছে। এইচটিটিপুল ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ কেটে রেখে অর্থ পরিশোধ করতে পারছে ফেসবুককে। সরকারও এ খাত থেকে আয় করছে। যদিও আগে এ আয়ের খাতা ছিল শূন্য।

তবে এইচটিটিপুলের মতো ফেসবুকের সেলস পার্টনার থাকলেও ইউটিউব, গুগল বা অন্যান্য মাধ্যমের জন্য কোনও এজেন্ট বা পার্টনার নেই। ফলে যারা ওইসব মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তাদের ব্যাংকিং চ্যানেল (ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড) বা বিভিন্ন পেমেন্ট প্রসেসর ব্যবহার করছেন। অনেকে ‘নন চ্যানেল’ ব্যবহার করেও এ খাতে খরচ করছেন। সেখান থেকেও সরকার কোনও রাজস্ব পায় না।

অনলাইন প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য প্রয়োজন হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড, অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর পেপাল বা পেয়োনিয়ারের মতো মাধ্যম। দেশে এইচটিটিপুল তাদের অপারেশন শুরু করার পর থেকে বৈধ চ্যানেলেই ফেসবুকে বুস্টিং ও বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য ডলার বা পেপালে পেমেন্ট করতে হচ্ছে না। দেশীয় মুদ্রায় (লোকাল কারেন্সি) সেসব বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে।

এইচটিটিপুলের ক্লায়েন্ট সলিউশন্স ম্যানেজার তানভীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ফেসবুক নিয়ে কাজ করছি। ফেসবুকে যেসব বিজ্ঞাপন যাচ্ছে সেসব থেকে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও বিদেশে টাকা পাঠাতে গেলে যেসব কর থাকে তা কেটে আমরা ফেসবুককে পরিশোধ করছি। ভ্যাট ও কর সরকারকে জমা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে এইচটিটিপুলের ৫ শতাধিক ক্লায়েন্ট রয়েছে।

বেসিসের সাবেক সভাপতি ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘নন চ্যানেল দিয়ে বিল বা মূল্য পরিশোধ করতে গেলে খরচ বেশি হতো। বৈধ চ্যানেলে খরচ কম হচ্ছে।’

দুই বছর আগেও এই খাতে দেশের বাইরে চলে যেত প্রায় হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেন ফাহিম মাশরুর। তিনি জানান, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন কমে গেছে। বাড়ছে ডিজিটাল মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিদেশি ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে তাদের মাদার কোম্পানির মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশের বিল পরিশোধ করে থাকে। এটা ঠিক নয়। ওই কোম্পানিগুলো যদি দেশে এফডিআই-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ এনে সংশ্লিষ্ট খাতে খরচ করতো তাহলে দেশ আরও উপকৃত হতো। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। এটাও কিন্তু এক অর্থে মানিলন্ডারিং।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ফিজিক্যাল প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে দেশের ভেতর থেকেই ফরমায়েশ করে পণ্য কিনতে হয় বা বিদেশ থেকে মেশিনারিজ আনতে হয়। সেক্ষেত্রে টাকা দেশের ভেতর থেকে বাইরে যায়। কিন্তু ডিজিটাল প্রোডাক্টের বেলায় এটা হচ্ছে না। কিছু ডিজিটাল কোম্পানি দেশের বাইরে থেকে মাদার কোম্পানির মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করে। ওই অর্থগুলো দেশে এনে তবে ডিজিটাল মাধ্যমের বিল পরিশোধ করার কথা।

দেশের একটি ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রধান পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈধ চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। নন চ্যানেলে কমেছে। কারণ এখন ডলারের পরিবর্তে টাকায় বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে, এটা বিশাল একটা সুযোগ।

প্রসঙ্গত, দেশে ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহারকারী বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবার প্রচার ও প্রসারের জন্য বিকল্প মাধ্যম হিসেব পছন্দের তালিকায় রেখেছেন গুগল-ফেসবুক-ইউটিউব। ফেসবুকের যেকোনও পোস্টের ‘অর্গানিক রিচ’ অনেক কমে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা বুস্টিং বা বিজ্ঞাপনের পেছনে ছুটছেন। ফেসবুক তাদের ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে স্বাভাবিক ‘রিচ’ কমিয়ে দিয়েছে যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির ব্যবসা বাড়ে। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি।

জানা যায়, দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে মাসে গড়ে ১০ হাজার ডলার খরচ করে। সেই হিসাবে এসব প্রতিষ্ঠান বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ হয়। অনলাইনে বিজ্ঞাপন না দিলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্যের অর্ডার আসা কমে যায়। অন্যদিকে এফ-কমার্সগুলো (ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স) প্রতিদিন গড়ে ১০ ডলার বুস্টিং বাবদ খরচ করে। দেশে বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সক্রিয় পেজগুলোই সাধারণত বুস্টিং করে।