মোঃ কাউছার উদ্দীন শরীফ, ঈদগাঁও:

কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে নির্বিচারে পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। এতে করে একদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে নিরাপদ আবাসস্থল।

পাহাড় কেটে সমতল করে ছোট ছোট প্লট তৈরি করে বিক্রয় করছে। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল বর্ষনে পাহাড় গুলো ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ ফুলছড়ির আওতাধীন ইসলামপুর ইউনিয়নের জুমনগর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিগত কয়েকমাস যাবৎ এলাকার বেশ কিছু দিন ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। যাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। তাদের সাথে সখ্যতা রয়েছে বনকর্তাদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০টি ডাম্পার গাড়িতে করে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করছে চিহ্নিত সিন্ডিকেট। প্রায় ৫০ ফুট ধারণকৃত প্রতি ডাম্পার পাহাড়ি মাটি ৮শ-১হাজার টাকা হারে বিক্রি করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে চক্রটি। চক্রটি এ পর্যন্ত ১-২টি ৫০-৬০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে।

জুমনগর এলাকার পশ্চিমে বসবাসরত কয়েক জন প্রবীন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য ছিল হরিণ, বাঘ, ভালুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ফলে ওই এলাকার পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এছাড়া পাহাড় উজাড় হওয়া কারণে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। এতে করে পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলোকে এখন আর দেখা যায় না বলে স্পটটি হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য।
সেখানে দশজন শ্রমিক বেলচা দিয়ে পাহাড় কেটে পাশের নিচু জায়গায় ফেলছিলেন।পাহাড়ের চূড়ায় ও পাদদেশে নানা গাছপালা রয়েছে। কেটে নেওয়া অংশ সমতল করে নির্মিত হচ্ছে একটি পাকা দালান।
জায়গার মালিক মো. মৃত আলী আকবরের ছেলে মোহাম্মদ আলী হোসাইন পাহাড় কাটার জন্য তাদের নিযুক্ত করেছেন। নতুন দালান তোলার প্রয়োজনেই পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড় কাটার অনুমতি আছে কি না, এ বিষয়ে তাঁরা জানেন না বলে জানান।
যোগাযোগ করা হলে জমির মালিক মো. আলী হোসেন বলেন, বাড়ি করার প্রয়োজনে মোঃ রশিদ মাস্টার প্রকাশ (কালু মাস্টারের)
কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে এই পাহাড়টা ক্রয় করেছি। বাড়ী নির্মাণের কাজেই নিজের পাহাড় কাটছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।
পাহাড় বিক্রেতা রশিদ মাস্টার বলেন, এপাহাড়ের দখল করছিলাম বহুবছর আগে আছে, তাই আমি গত দুই বছর আগে এপাহাড় বিক্রি করেছি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর পরিদর্শক মঈনুল হক বলেন, ‘আমাদের কার্যালয় জুমনগর পাহাড় কাটার কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দু শুক্কুর বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টা আমি দেখছি। এপাহাড়ের খতিয়ান আছে।
এই ব্যাপারে ফুলছড়ি বিট অফিসার আকামলা উল্লাহ বলেন, আমি সরোজমিনে গিয়েছিলাম। বিষয়টা দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।