এম. আজিজ রাসেল:

দীর্ঘ কর্মজীবনে কক্সবাজারকে জেনেছি অত্যন্ত কাছ থেকে। এখানকার মানুষ খুবই সহজ-সরল। আমি চেষ্টা করেছি নিজ দায়িত্ববোধ থেকে কক্সবাজারের মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করার। যার জন্য এই অল্প সময়ের মধ্যে এখানকার মানুষ মন প্রাণ উজাড় করে আমাকে ভালবেসেছে। এই ভালবাসার ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসনের এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনায় এ কথা বলেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

এসময় জেলা প্রশাসক মো. হোসেনের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান কক্সবাজার পৌর পরিষদ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে একটি পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছেন। ইতোমধ্যে এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। সরকারের গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই শহরকে আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্র সহায়ক হবে।

বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি জেষ্ট্য সাংবাদিক ফজলুর কাদের চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল-১ মেয়র মাহবুবুর রহমান, প্যানেল মেয়র-২ হেলাল উদ্দিন কবির, কক্সবাজার থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক এড. তাপস রক্ষিত, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন বকুল, সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিত পাল বিশু, জেলা কালচারাল অফিসার সুদীপ্তা ও সাংস্কৃতিককর্মী দীপক শর্মা দীপু।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ, রাজ বিহারী দাশ, সালাহ উদ্দিন সেতু, আকতার হোসেন, মিজানুর রহমান, মহিলা কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি, ইয়াসমিন আক্তার, জাহেদা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ,এম নজরুল ইসলাম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কবি এম. জসিম উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক সমীর পাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আজিম নিহাদ, দপ্তর সম্পাদক দোলন ধর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম.এ আজিজ রাসেল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা আলম, শহর শাখার সভাপতি কফিল উদ্দিন, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক উসেন থোয়েন, নুরুল আবছার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস যখন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হানা দেয় সেই সূচনা লগ্ন থেকেই প্রথম সারির যোদ্ধা হয়ে কাজ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। দেশে প্রথম বারের মতো লকডাউন ও রেড জোন ঘোষণা করে তিনি কক্সবাজারের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। করোনাকালীন কর্মহারানো মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাতদিন নিরলসভাবে কাজ করেছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কক্সবাজারবাসীকে সুরক্ষায় রাখতে ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি চলমান রেখেছেন।

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে শুধু একজন যোদ্ধা নন তিনি, এ যুদ্ধে বিজয়ী হতে সম্মুখ যোদ্ধাদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ প্রদান করে গেছেন। জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবায় জনগুরুত্বপূর্ণ সব মেডিকেল সামগ্রী সংগ্রহে প্রথম এবং প্রধান ভূমিকা রাখতে দেখেছি একজন মানবিক জেলা প্রশাসককে। যার ফলে আজ জেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল করোনা মোকাবেলায় স্বয়ং সম্পূর্ণ।

বক্তারা আরও বলেন, কক্সবাজারে টানা তিন বছর ২ মাসের কর্মজীবনে যারা কামাল হোসেনকে কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন তারা দেখেছেন, কক্সবাজারের মানুষের পাশে দাঁড়াতে তার ভূমিকা কি ছিল।

কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি শিশু সায়ানকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়ে উঠা, কখনো ছিন্নমূল শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থাকা।

একজন কামাল হোসেনের হাত ধরে কক্সবাজারে প্রতিষ্টিত হয়েছে অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষায়িত একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান “অরোণাদয়”। শিক্ষা প্রসারে গড়ে তুলেছেন ডিসি কলেজ। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরে এসে একজন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের হাত ধরে আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে শিশুপার্ক, করোনা হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। যা তিনি চাইলেও কক্সবাজার থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না। এসব প্রতিষ্ঠান একদিন কক্সবাজারের সম্পদ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ জন্য তিনি কক্সবাজারবাসীর হৃদয়ের মণি কোঠায় আজীবন বসবাস করবেন।