সিবিএন ডেস্ক:
নানা-জল্পনা কল্পনার পর আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে হেফাজতের মহাসচিবের পদে আনা হলেও এক মাস না পেরোতেই মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হয়েছে পদটি। এতে করে আবারও শুরু হয়েছে মহাসচিব পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন।

কে হচ্ছেন বাংলাদেশের ইসলামী শীর্ষ এ সংগঠনের মহাসচিব— তা নিয়ে সরগরম কওমি মতাদর্শীরাও। হেফাজতের নতুন কমিটিতে চারজন যুগ্ম মহাসচিব থাকলেও তাঁদের মধ্যে থেকে মহাসচিব হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হেফাজতের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী স্পষ্ট করেই বলেছেন- এরকম কোনও সম্ভাবনা নেই।

ধারণা করা হচ্ছে, ৩২ জন নায়েবে আমির থেকে যে কেউ মহাসচিব পদটি পেতে পারেন। যদিও ৩২ জনের মধ্যে নাম শোনা যাচ্ছে চারজনের। এরা হলেন- খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, কামরাঙ্গীচর মাদ্রাসার মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, নারায়ণগঞ্জের মাওলানা আব্দুল আওয়াল এবং নেজামে ইসলামের মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী। যদিও আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও নুরুল ইসলাম জিহাদীর ‘সম্ভাবনা’ দেখা যাচ্ছে বেশি।

কে হচ্ছেন হেফাজতের নতুন মহাসচিব এ খবরের জন্য বেশিদিন আর অপেক্ষা করতে হচ্ছেনা। হয়তো আগামীকাল রবিবারই ঘোষণা হতে পারে হেফাজতের নতুন মহাসচিবের নাম।

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মহাসচিব নির্ধারণ করার কথা চলছে। আগামী সপ্তাহে ঘোষণা আসতে পারে। আমির মহোদয় নিজস্ব ক্ষমতাবলে মহাসচিব ঘোষণা করবেন। যুগ্ম-মহাসচিবদের মধ্য থেকে কেউ আসার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যদিও একক ক্ষমতা আমিরের।’

হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী গত ১৩ ডিসেম্বর আকস্মিক মারা যান। এর পর থেকেই ওই পদটিতে নতুন মুখ নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। তবে এ নিয়ে নানা জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়নি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার আজগর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (বড় মাদরাসা) মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী মারা যান।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং আল্লামা শফীর ছেলে ও সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীসহ একটি অংশের বিরোধিতার মধ্যেই গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করা হয়। এ কমিটিকে অবৈধ আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা অব্যাহত রাখে ওই অংশ।

এদিকে আল্লামা শফীকে মানসিক নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে— এমন অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দের আদালতে মামলা করেন শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন। মামলায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজানা আরো ৮০ থেকে ৯০ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় উল্লেখ করা আসামিদের বেশির ভাগই হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী; তাঁরা বিভিন্ন পদে রয়েছেন।

হেফাজতের নতুন কমিটিতে স্থান না-পাওয়া অংশটির উদ্যোগেই এই মামলা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন। তাঁরা এ ব্যাপারে বলেছেন, আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। আইনিভাবেই এটির মোকাবেলা করা হবে। -সিভয়েস