আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসের তিনটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন ধরনগুলো মূল ভাইরাসটির চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। তবে এটি বেশি প্রাণঘাতী বা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তারপরও, বাড়তি সতর্কতাস্বরূপ বেশ কিছু দেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

ভাইরাসের রূপান্তর নতুন কিছু নয়। এটি বহুদিন ধরে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার পথে ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। একারণে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন আবিষ্কারে অবাক হননি গবেষকরা।

তবে ভাইরাসের রূপান্তর কোথায় ঘটবে, কোন ধরনের রূপান্তরে সেটি বেশি প্রাণঘাতী বা সংক্রামক হয়ে উঠবে, অথবা প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়বে- এসব ধারণা করা বেশ কঠিন।

সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের একটি রূপান্তর ধরা পড়েছে যুক্তরাজ্যে। গণমাধ্যমে এটিকে করোনার ব্রিটিশ ধরন বলা হলেও রূপান্তরটির প্রাতিষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে ভিউইআই-২০২০১২/০১ (২০২০ সালের ডিসেম্বরে তদন্তাধীন প্রথম ধরন)। অনেক গবেষক রূপান্তরটিকে বি.১.১.৭ নামেও উল্লেখ করছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসের এই ধরনটি সেপ্টেম্বরের মাঝামঝি যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, রাজধানী লন্ডন অথবা কেন্ট কাউন্টিতে সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর দ্রুতই সেটি অনেক এলাকায় নতুন সংক্রমণের প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ব্রিটিশ ধরনটি বেশি প্রাণঘাতী প্রমাণ হয়নি। তবে গবেষকরা বলছেন, এটি মূল ভাইরাসের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক।

নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীদের শরীরে আগেরটির মতোই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ জ্বর, শুষ্ক কাশি, খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ চলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যায় ভুগছেন রোগীরা।

করোনার ব্রিটিশ ধরনটি ইতালি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতেও পাওয়া গেছে এটি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক দেশেই ব্রিটিশ ধরন শনাক্ত না হলেও যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাসের ব্রিটিশ ধরন থেকে আরেকটু রূপান্তরিত নতুন ধরন পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এটি।

৫০১.ভি২ নামের এই ধরন দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটি।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নতুন এই ধরন মূল ভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। তবে এর কারণে গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে, তেমন প্রমাণ এখনও দেখা যায়নি।

সবশেষ, নভেল করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে নাইজেরিয়ায়। এর পরিবর্তন যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের চেয়ে একেবারে আলাদা।

পি৬৮১এইচ নামের নাইজেরীয় সংস্করণটিকে করোনার অন্য দু’টি ধরনের মতো দ্রুত ছড়াতে দেখা যায়নি। এর কারণে সংক্রমণের হার বাড়ছে, তেমন প্রমাণও মেলেনি।

তবে নতুন রূপান্তরটি কিছু ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ভাইরাস শনাক্তকরণ আরও কঠিন হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।