দীপক শর্মা দীপু :

জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনকে বদলী জনিত কারনে ২৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার ডিসি কলেজ ও অরুণোদয় স্কুল বিদায় সম্বর্ধনা দিয়েছেন। এ বিদায় অনুষ্ঠানে কেঁদেছে ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক। তাদের কান্নায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অতিথি, দর্শকরাও। সম্বর্ধিত অতিথি জেলা প্রশাসক নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চোখের কোনায় জল এসে যায়। চশমা খুলে টিস্যু দিয়ে জল মুছে নেন।

ডিসি কলেজের ৭১ ও ৫২ ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীরা যখন পাশে এসে দাঁড়ান তখন আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হন প্রতিষ্ঠাতা জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। একইভাবে সবাই ক্ষনিকের জন্য ফটোসেশনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও অভিভাবক কামাল হোসেনকে কাছে পেয়ে আত্মাহারা হন। সাবলিনভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কলেজের শিক্ষক তাসনিম ইসলাম। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শিক্ষক মো: কায়সার উদ্দিন, আবেগপ্রবণ বক্তব্য রাখেন শিক্ষক কে এম আহসান উল্লাহ। অধ্যক্ষ মো: ইব্রাহীম হোসাইন তার কান্নার জন্য তার বক্তব্য শেষ করতে পারেননি। ২য় বর্ষের ছাত্রী ফরিদা ইয়াসমিন কলির পাঠ করা বিদায় মানপত্রের বাক্য গুলো যেমন সবাই অনুপ্রাণিত করেছে তেমনি বিদায়ের সুরকে হৃদয়ে দাগ লাগিয়েছে। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের সহধর্মীনি গুলশান আরা বলেন, ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব কিছু করা সম্ভব। যে যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করলে যা ইচ্ছে করবে সব করা সম্ভব। মানুষের মঙ্গল ও মানবতার জন্য তেমনি জোরালো ইচ্ছা শক্তি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন কক্সবাজারে এসব প্রতিষ্ঠান করেছেন। আমিও এসব প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষনিক খবরা খবর নিতাম। আমাদের দুইজনের মধ্যে বেশির ভাগ সময় এসব প্রতিষ্ঠান কিভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয় এবং তা নিয়ে মেতে থাকি। আমাদের দুইটি সন্তান রয়েছে। আর আমাদের আর দুইটি সন্তান হচ্ছে অরুণোদয় স্কুল ও ডিসি কলেজ। আমাদের আদর ও যত্ন সব সময় থাকবে। আর আমাদের এই আদরের দুই সন্তানকে কক্সবাজারবাসীর কাছে রেখে যাচ্ছি, তারাই দেখে শুনে ভালো রাখবেন – এমন প্রত্যাশা করছি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিসি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এডিএম মো: শাজাহান আলি বলেন, জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকবেন। এমন ইতিহাসে তিনি গল্প হয়ে রইলেন। তিনি একজন আমাদের অনুকরনীয় কর্মকর্তা । একজন ডিসি চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। সেটা আমাদের জন্য শিক্ষনীয়।

জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, আমি কোন দিন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুরে থাকবোনা। আর কক্সবাজারের মানুষের কাছ থেকেও দুরে থাকতে পারবোনা। শারীরিক দুুরুত্ব থাকতে পারে কিন্তু মনের দুরুত্ব কখনো হবেনা। সব সময় খোঁজ খবর নেয়া হবে। মান সম্মত কলেজ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। একদিন এই কলেজ আন্তর্জাতির মানের হবে এমন প্রত্যাশা করছি। আর ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীরা নি¤œ পদে চাকুরি করুক সেটা কামনা করিনা। তাদের মানব সেবা ও দেশের উন্নয়নে সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের নেতৃত্বে পরিচালনা হবে দেশ। তারা হবে রাজনৈতিক নেতা , তবে বড় নেতা। তারা সরকারি চাকুরি করবে, তবে প্রথম শ্রেণির অফিসার। তারা সাংবাদিক – তারা শিক্ষক হবে, তবে তাদের হতে হবে উচ্চমানের । ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের নানাক্ষেত্রে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসতে হবে। আমি থাকবোনা, কিন্তু প্রতিষ্ঠান থাকবে। আর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যখন ডিসি হবে , বড় নেতা, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তি হবে তখনি হবে আমার স্বার্থকতা এবং প্রতিষ্ঠাকালীন যারা সময়, শ্রম, সহযোগিতা করেছেন তাদের স্বার্থকতা। তিনি ছাত্র ছাত্রীদের সেইভাবে গড়ে উঠার জন্য আহবান জানান।

এর পর অরুণোদয় স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। এখানে অরুণোদয় স্কুলের শিশুরা জড়িয়ে ধরের তাদের আস্থার খুঁটি জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনকে। ফুল ছিটিয়ে বরণ করেন। এসব শিশুরা নেচে গেয়ে সম্ভাষণ জানান। শিশুদের ইচ্ছা পূরনে কেক কাটেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসেন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। কিন্তু শিশুরা সেখানেও ছুটে যান তার কাছে। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের সহধর্মীনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক গুলশান আরা, অরুণোদয় স্কুলের পরিচালক এডিএম মো: শাজাহান আলি, সদর উপজেলা ইউএনও সুরাইয়া আক্তার আখিঁ, অরুণোদয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: শাহজালাল।

এসময় বক্তারা বলেন, , মানুষের জন্ম হয় মানুষ মরে যায়। এর মধ্যে কিছু মানুষ মরেও অমর হয়ে থাকে। একজন মানুষকে জন্মে নয়, কর্মে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষের জীবনের কর্মে মৃত্যুর পরও সবার মাঝে বেঁচে থাকে। তেমনি একজন আমাদের মাঝে যুগ-যুগান্তর বেঁচে থাকবেন তিনি হচ্ছেন জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। তিনি কক্সবাজারে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সেই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সব সময় আমাদের মাঝে উজ্জীবিত থাকবেন। জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন ও তার সহধর্মীনি গুলশান আরা বেগম এই স্কুলের অবিচ্ছেদ্য থাকবেন আর শিশুদের আত্মজ হয়ে থাকবেন। অনুষ্ঠান শেষে ফটোসেশনে আবারো শিশুরা জড়িয়ে ধরের তাদের ঠিকানার অভিভাবক জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনকে এবং তার সহধর্মীনি গুলশান আরা কে। এসময় চোখের কোনায় জল টলমল করে দুইজনের।