সিবিএন ডেস্ক:

আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি আসল না নকল তা বুঝবেন কীভাবে? ফোনটি আসল না হয়ে নকল বা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করলে কী হবে—এসব প্রশ্ন মাথায় এলে বা উঠলে উত্তর হবে, ফোনটি বন্ধ হয়ে যাবে। আর সচল বা চালু করা যাবে না। দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন চিহ্নিত করা এবং দেশে প্রবেশ বন্ধ করতে আগামী মার্চের মধ্যে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) সিস্টেম চালু হতে যাচ্ছে।
এই সিস্টেম চালুর পরে দেশে কোনও অবৈধ মোবাইল ফোন প্রবেশ করলে তা এই যন্ত্রটি ধরতে পারবে এবং সে ধরনের মোবাইল সচল হতে দেবে না। ফলে দেশে কোনও অবৈধ মোবাইল ফোন প্রবেশ করতে পারবে না, বা অনিবন্ধিত কোনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। সিস্টেমটি চালু করতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সিনেসিস আইটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। সিনেসিস আইটি এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) সিস্টেমের যন্ত্রাংশ সরবরাহ, স্থাপন ও পরিচালনা করবে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে চালু হতে পারে এনইআইর সিস্টেম।
মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি
মোবাইল ফোন বৈধ না অবৈধ তা দেখেতে বিটিআরসি সঠিক আইএমইআই যাচাই পদ্ধতি রয়েছে। এজন্য একটা ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে, যাকে ডাকা হচ্ছে এনইআইআর নামে। এখন অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রাথমিক যে ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে সেটা ব্যবহার করা যাচ্ছে। এখন যেকেউ মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD টাইপ করে স্পেস দিয়ে মোবাইলের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে সেটি ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে আইএমইআই নম্বরটি বিটিআরসির ডাটাবেজে সংরক্ষিত রয়েছে কি না তা জানা যাবে। ফিরতি মেসেজে ডাটাবেজে সংরক্ষণের তথ্য থাকলে সেটি হবে বৈধ ফোন।
জানা গেলো, ২০১৯ ও ২০২০ সালে দেশে তৈরি ও আমদানি হওয়া প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ মোবাইলের আইএমইআই ডাটাবেজে সংরক্ষিত আছে। ২০২১ সাল পরবর্তী যেসব মোবাইল তৈরি হবে এবং আমদানি হবে সেসবের আইএমইআই ডাটাবেজে যুক্ত হয়ে যাবে। ২০১৮ সালের আগের মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) থেকে ‘ওকে’ হয়ে সরাসরি আইএমইআই ডাটাবেজে চলে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল সেটগুলোও নিবন্ধিত হয়ে যাবে। এনইআইআর চালু করা হলে কোনও সিমকার্ড অবৈধ মোবাইল সেটে (যেগুলোর আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজে নেই) চালু হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মোবাইল ফোনের আসল নকল চেনার জন্য মূলত দুটি ডাটাবেজ কাজ করবে। একটি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তৈরি এনইআইআর ডাটাবেজ, অন্যটি আইএমইআই ডাটাবেজ। এনইআইআর ডাটাবেজে সংযুক্ত থাকবে মোবাইল অপারেটররা (এনইআইআর), অন্যদিকে আরও থাকবে মোবাইল উৎপাদক ও আমদানিকারকরা (এনএআইডি)। এই দুটি পক্ষের মাধ্যমেও এনইআইআর মোবাইলের শুদ্ধতা যাচাই করতে গিয়ে কোনও সমস্যা পেলে মোবাইলগুলো ‘হোয়াইট’ থেকে ‘গ্রে’তে রাখা হবে। এসময় গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে গ্রাহক তার মোবাইলের শুদ্ধতা যাচাইয়ে ব্যর্থ হলে হ্যান্ডসেটটি ব্ল্যাক লিস্টে ফেলে স্থায়ীভাবে ব্লক করার নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইএ’র যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আইএমইআই ডাটাবেজ ও এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশে মোবাইলফোন নির্ভর অপরাধ কমবে। মোবাইলফোন ছিনতাই, চুরিও কমবে। চোরাই ফোন বিক্রি ও চালু করা যাবে না। অন্যদিকে গ্রে মার্কেট ছোট হতে হতে শূন্যে নেমে যাবে। প্রকারান্তরে বৈধ, চ্যানেলনির্ভর ও দেশে তৈরি মোবাইলফোনের বাজার বড় হবে।
নতুন ব্যাগেজ আইন
ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে ৮টি মোবাইল ফোন আনা যায়। এর আগে নিয়ম ছিল সর্বোচ্চ ৫টি মোবাইল ফোন আনা যাবে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই নিয়ম কার্যকর রয়েছে।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর টেলিযোগাযোগ নিযন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি একটি পরিপত্র জারি করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে পাঠায়। এতে উল্লেখ ছিল ‘ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট আমদানির সংখ্যা ৫টির পরিবর্তে ৮টি করা হয়েছে। প্রত্যেক যাত্রী প্রতিটি বোর্ডিং পাস বা সংশ্লিষ্ট ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজ অনুয়ায়ী বিটিআরসি’র অনাপত্তিপত্র ছাড়া ৮টি মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে পারবেন। তবে এসব মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি আনা যাবে বিনা শুল্কে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে কাস্টমস সংশ্লিষ্ট আইন প্রযোজ্য হবে।
জানা গেছে, আইএমইআই ডাটাবেজ বা এনইআইআর ডাটাবেজ চালু হলে বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়ে এসব মোবাইল নিয়ে আসার সময় সেখানে রাখা ডেস্কে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বিদেশ থেকে আনা মোবাইলের আইএমইআই নম্বর লিখে দিতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্টরা তা যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসির ডাটাবেজে পাঠাবেন। বিদেশ থেকে আনা মোবাইলের উপযুক্ত প্রমাণপত্র থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চালু করে দেবেন। বিদেশ থেকে পাওয়া উপহার বা কেনা ফোনের বেলায় সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধিবিধান অনুসরণ করা হবে বলে জানা গেছে।