খোরশেদ আলম


মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে যেদিন কক্সবাজার শহরে হঠাৎ আওয়াজ এলো —
পাকিস্তানের পক্ষে আমাদের বঙ্গোপসাগরে আমেরিকার সপ্তম নৌ-বহর এসেছে — সেলিং, বোমারু বিমানের আঘাতে ঘন্টার মধ্যে শহর ধ্বংস করে দিবে ।
কালুরদোকানে দৌড়ে আমরা পাড়ার বন্ধুরা হাজির, সৈকতে দেখতে যাব সপ্তম নৌ-বহর ।
কি আর দেখা মানুষ প্রাণভয়ে, জীবনটা হাতে নিয়ে দিক বেদিক ছুটছে ।
অফিস , ব্যবসাস্হল, দোকানপাট, কোর্ট-কাচারী, এবং নিজের কাজকর্ম সব ফেলে বাড়ীর দিকে সবাই পালাচ্ছে । কিছু সংখ্যক রাস্তায় গাড়ী ছিল তাও পালিয়ে নিমেষেই হাওয়া ।
কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি রাস্তা ফাঁকা । জনমানবশূন্য ।
অল্পক্ষণ পর শুনি, হাশেমিয়া মাদ্রাসা’র দিক থেকে একটা জীপের আওয়াজ । আওয়াজ মিলিয়ে যেতে না যেতে জীপ আমাদেরকে অতিক্রম করল, গাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে বসা আর একজন রাইফেল সামনে তাক করে গাড়ীতে দাঁড়িয়ে – আমার স্পষ্টতঃ মনে আছে সে আর কেউ নয় মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক । কি অসীম সাহস শহরের মুক্তিযুদ্ধাদের সামান্য রাইফেল নিয়ে আমেরিকার সপ্তম নৌ-বহরের মোকাবিলা করবে !!
অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা , হাজার সালাম ।
সেদিন আমরা কেউ সপ্তম নৌ-বহর কি চিনতাম না আজ মনে পড়লে আৎকে উঠি । যদি সত্যিই সেদিন আসত স্বাধীনতা যে আরও কতকাল দীর্ঘায়িত হত , কত লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিত ভেবে কূল-কিনারা পাইনা ।
অবশ্য পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য আমেরিকা বঙ্গোপসাগরে নৌবহর পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল তা কিন্তু কক্সবাজারের মানুষের কানে ভুলভাবে পৌঁছল সাগরে চলে এসেছে ।
সপ্তম নৌ-বহর তখন ছিল ভিয়েতনাম সাগরে ভিয়েতনাম ও চীনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ।
সেখান থেকে মার্চ করার কথা । হিসাবে মিলেনি তাই আসেনি । বাংলাদেশের পক্ষে ভারত ও রাশিয়ার নৌ-বহর মার্চ করার ঘোষণা দেয় । আমেরিকা ভেবে দেখল ভিয়েতনামে চীনের সাথে, বঙ্গোপসাগরে এসে ভারত রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ মোটেই তাদের জন্য ভাল ফল হবেনা তাই যাত্রা পরিত্যাগ করল ।
আল্লাহ আমাদের সহায় ছিল আমরা দীর্ঘ সময়ের
যুদ্ধ থেকে রেহাই পেলাম — দেশ হল স্বাধীন ।

তারিখ ২২/১২/২০২০