ইমাম খাইর, সিবিএন:
যারা সবুজ বন কেটেছেন; গাছগাছালি পুড়িয়েছেন, ‘প্রকৃতির পেরেক পাহাড়’ ধ্বংস করেছেন, আপনারা মানুষ নন। আপনারা খোদার গজব। কিছু মানুষের পুনর্বাসনের সুযোগে হাজারো মানুষকে গৃহহারা করবেন, এটা কেমন কথা? আপনাদের কারণে অভিশাপ নামবে। কোন সুযোগ সন্ধানি লোককে ছাড় দেওয়া হবে না।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের হামজার ডেইলে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ ও সামাজিক বনায়ন জ্বালিয়ে দিয়ে পুনর্বাসনের প্রতিবাদে মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার পৌর ভবনের সমনের সড়কে বিক্ষোভে বক্তারা বলেছেন, আমরা উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন হতে পারে না।
বিক্ষুব্ধ খুরুশকুলবাসী দুঃখের সঙ্গে বলেন, কক্সবাজার থেকে ভূমিদস্যুরা গিয়ে গৃহনির্মাণের নামের দীর্ঘদিনের সামাজিক বনায়ন পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির পেরেকে আঘাত করেছে। পুনর্বাসনের নামে অনেকে বাণিজ্যে নেমেছে। তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কক্সবাজার শহরের বালিকা মাদ্রাসা এলাকা থেকে খুরুশকুলে স্থানান্তর হওয়া হতদরিদ্র মানুষদের আশ্রয়ের জায়গাটুকু অবৈধভাবে দখলের জন্য খুঁটি গেড়েছে, নাম বেনামে জমি দখলের স্বপ্ন দেখছে।
মানববন্ধনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জসিম বলেন, চার’শ পরিবারকে পুনর্বাসনের নামে হাজারো পরিবার নাস্তানাবুদ করে ফেলা হয়েছে। অনেক সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ঢুকে পড়েছে। দখলবাজি চালাচ্ছে। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী এমন উন্নয়ন চান নি।
তিনি বলেন, ভিন্ন এলাকার কিছু মানুষকে আমাদের এলাকায় পুনর্বাসন করা হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবেও অবগত করা হয় নি।
চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, বিনা চ্যালেঞ্জে খুরুশকুলের এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়া হবে না। খুরুশকুলের মানুষের অধিকার রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা থাকবে। তবে, কোন দখলবাজের স্থান হবে না।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- খুরুশকুলের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুর রহিম, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কাজী দিদারুল আলম, সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, বিএনপি নেতা এডভোকেট সাইফুল্লাহ নুর, সদর উপজেলা যুব লীগের যুগ্মসম্পাদক আলিম উদ্দিন, জেলা তাঁতী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম সিকদার, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম, ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহেদুল ইসলাম, ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য জয়বর্ধন, ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য যৌযান, ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ শফি, খুরুশকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ আলমগীর, দক্ষিণ খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনসুর আলম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান সিকদার, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সমাজসেবক জিয়াউল হক লেদু, ছাত্র নেতা আইয়ুব আলি খান, রমজান আলী জিতু, ফয়সাল মাহমুদ, যুবলীগ নেতা সাহাব উদ্দিন, হেদায়েত উল্লাহ বাবুল।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে সচেতন খুরুশকুলবাসী। স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিষয়টি ‘দেখবেন’ বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক ।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অংশে (পশ্চিম বাহারছড়াস্থ বালিকা মাদ্রাসা পাড়া) অবস্থান করা হতদরিদ্র লোকদের সরকারের পক্ষ থেকে নগদ আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি জায়গা দিয়ে খুরুশকুলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আর এ অসহায় মানুষদের জন্য সরকারের দেওয়া জায়গাটুকুও অবৈধভাবে দখলের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে প্রভাবশালীচক্র।
খুরুশকুলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানান্তর হওয়া মানুষগুলো কষ্টের মধ্যে রয়েছে। একদিকে পাহাড়ী এলাকায় শীতের মধ্যে ঘর তৈরীর আগ পর্যন্ত খোলা আকাশের নীচে বসবাস। অন্যদিকে নেই বিদ্যুৎ, পানি, খাবার আর টয়লেট সমস্যা। এরই মাঝে প্রভাবশালী দখলবাজরা তাড়া করছে স্থানান্তর হওয়া এই অসহায় মানুষদের। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সরকারের মহতি কাজকে।