বিশেষ প্রতিনিধি :
পেকুয়ায় গণপিটুনিতে মিন্টু (৪২) ডাকাত নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিসা বেগমকে ও তার ভাই মোঃ হাবিবুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খাদিসার বেগমের হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে চকরিয়া পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বটতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে ।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন সিবিএনকে জানান, আমি পাহাড়ে ঘর বেঁধে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছি। বেশকিছু দিন আগে আমার কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে মিন্টু ও জসিম। আমি কোনো টাকা দিতে পারবোনা বলে জানাই। প্রায়ই সময় ফোন ও মানুষ পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ঘরে এসে ভাংচুর করে। আমি বাধা দিলে আমার পরিবারের উপর হামলা চালায়। এতে আমার স্ত্রী খাদিসার হাতে কুপ দেয় মিন্টু। এসময় হাতের কব্জি দু’টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, আমি ও আমার সন্তান ৪জনকে তারা মারধর করে। আমরা চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে তাদেরকেও তাড়া করে। তখন এলাকাবাসী ও তাদের মাঝে তুমুল ঝগড়া হয়। এরপর আমি আর কিছু জানিনা। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে চমেক হাসপাতালে চলে আসি।
স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে মিন্টু ও জসিম গ্রুপের একদল সন্ত্রাসী স্থানীয় বাসিন্দা জয়নালের বাড়িতে যায়। সেখানে দুপক্ষের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে মিন্টু বাহিনীর লোকজন জয়নালের পরিবারের উপর হামলা চালায়। নিহত মিন্টু কোমর থেকে রামদা বের করে কয়েকজনকে কোপ দেয়। এতে খাদিসার বাম হাত দু’টুকরো হয়ে যায়।
গণপিঠুনিতে নিহত ঘটনার খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ মিন্টু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
অন্য একটি সূত্রে জানায়, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বটতলীর বনবিভাগের বিরোধীয় জায়গায় মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে এক পক্ষ জায়গা দখলে নিয়ে বালু উত্তোলন করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় এক পক্ষ মো: জয়নাল এর স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিঁয়ে গুরুতর জখম করে। এ খবর চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন এসে মিন্টু ও জসিম বাহিনীর গংদের গণপিটুনি দেয়। এতে অন্যরা পালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি মিন্টু’র। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় মিন্টু।
জানা যায়, বাঁশখালীর আলোচিত খুন, অস্ত্র , ডাকাতি, চাদাঁবাজি ও বন মামলার আসামি মিন্টু মিয়া(৪২) প্রায় ডজন খানেক মামলার আসামি। পুইছড়ির আলোচিত সমশু হত্যার ১ নম্বর আসামি মিন্টু। তার বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল, ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বন থেকে রাতের আঁধারে গাছ কেটে পাচার, চাঁদাবাজ, ডাকাতিসহ গুরুতর অনেক অভিযোগ মিন্টু’র বিরুদ্ধে। পুইছুড়ি ও পেকুয়ায় জুম পাড়ায় তার একটি গং রয়েছে। আরেক কুখ্যাত ডাকাত পুইন্যার ছেলে জসিম, আবদু হামিদ, গফুর, ভুইস্যা’কে গ্রে তুলেছে ডাকাত বাহিনী। তাদের অত্যাচারে অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করছে।
বেশ কিছুদিন আগে পুইছড়ি সচেতন নাগরিক কমিটির অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে তাদের একজন প্রানে মেরে ফেলবে বলেও মিন্টু হুমকি দেয়। মিন্টু নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিলেও কাগজে পত্রে যেন কোথাও তার নেই। পুইছড়ি ৪ নল ওয়াডের ইউপি সদস্য ফৌজুল করিম প্রকাশ ফজু’র সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। ফজু আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই সুবাধে মিন্টু পুইছড়ি প্রেম বাজারে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে সময় কাটায়। কিছুদিন মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশে হামলা চালিয়েও আলেচনায় আসেন।
মিন্টু’র ভাই শাহ আলম জানায়, আমার ভাইয়ের কোনো দোষ নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই
পেকুয়ার থানার (ওসি) তদন্ত কানন সরকার জানান, লাশ এর সুরতহাল তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে ।
বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, নিহতের ঘটনাস্থল পেকুয়া থানায় হওয়ায় মামলা ও সুরহহাল হবে পেকুয়া থানায়। তবে মিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় খুন, অস্ত্র , ডাকাতি, চাদাঁবাজি ও বন মামলা রয়েছে।