ইমাম খাইর, সিবিএন :
অনেকটা ডাকঢোল পিটিয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ ‘বে-ওয়ান ক্রুজ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। যেখানে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পর্যটন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরের মান্যগন্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
রবিবার (২০ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার মেরিন একাডেমির জেটিঘাটে পায়রা উড়িয়ে জাহাজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহবুব চৌধুরী এমপি।
এ সময় বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী উপস্থিত ছিলেন। সাগরপথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাহাজটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানসহ মান্যগন্য ব্যক্তিগণসহ কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাত দেড়টার দিকে তারকামানের জাহাজটি কক্সবাজার পৌঁছে।
এদিকে, কর্ণফুলী শীপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ‘এমভি বে-ওয়ান ক্রুজ’ উদ্বোধনের দিনেই চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলেছেন আমন্ত্রিতরা। অতিথিদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। বসার স্থান, খাবার ও পানীয় নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার আমন্ত্রিতরা। করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করা হয় নি। জাহাজের বিভিন্ন সেকশনে তথ্যের জন্য গেলে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে সাংবাদিকরা। অনেককে নাজেহাল করা হয়।
অভিযোগ হলো, সাগরপথে যাত্রার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভিআইপি প্রথার প্রচলন শুরু হয় জাহাজটিতে। সাধারণ অতিথিদের সাথে অসদাচারণ করা হয়েছে। জাহাজজুড়ে ছিলনা কোন নিয়ম শৃঙ্খলা। পর্যাপ্ত খাবার ও পানি থাকা সত্বেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিথিদের খাবার ও পানি দেয়া হয়নি। বয়স্ক, ডায়াবেটিসের রোগি ও শিশুদের বেশ কষ্ট পেতে হয়েছে।
জাহাজের দ্বিতীয় তলায় ক্যান্টিনে (বুফে) খাবার দেয়ার বেলায় নাটকীয়তা চোখে পড়ে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খাবারের জন্য কেন্টিনের সামনে খালি প্লেটহাতে ক্ষুধার্তদের দীর্ঘ লাইন পুরো আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আমন্ত্রিত যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন কক্সবাজারের অনেক নবীন-প্রবীন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী।
তাদের দুঃখ, জাহাজে যাত্রীদের হাহাকার উপেক্ষা করে তথাকথিত ভিআইপিদের জন্য খাবার নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। খাবার চেয়ে উল্টো অপমানের শিকার হয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়ে ঢাকা থেকে আসেন কামাল হোসেন নামের ব্যবসায়ী।
জাহাজে ঘটে যাওয়া আচরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দাওয়াত করে এভাবে অপমান করবে, ভাবিনি। জীবনে এমন আয়োজনে যাইনি। আগ্রহভরে এসে চরম অপমানিত হয়েছি।

খাবারের জন্য জটলা ও পানির জন্য হাহাকার ।

আমন্ত্রিত অতিথি দৈনিক সমুদ্র কন্ঠের সম্পাদক অধ্যাপক মইনুল হাসান পলাশ বলেন , যারা অতিথি হিসেবে গেছেন তারা মালিক পক্ষের আচরণে সম্পূর্ণ হতাশ। অতিথিদের ডেকে এনে অপমান করার মত ।সেবা প্রদানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি ছিল বিশেষ কিছু ব্যক্তির প্রতি। পর্যটনের বিকাশে এটা আনা হলেও তাদের ব্যবস্থাপনা ‘পর্যটন বান্ধব’ নয়।

সাংবাদিক জসিম উদ্দীন ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ,

হাশরের ময়দান থেকে বেঁচে ফিরে….

কথিত বিলাসবহুল বে-ওয়ান জাহাজে ২০ হাজার পানির বোতল মজুদ থাকার পরেও পানির তৃষ্ণায় ছটফট করে বেহুশ হওয়া মানুষকেও এক বোতল পানি দেয় নি।
তাছাড়া ৫ হাজার মানুষের খাবার মজুদের পরেও ক্ষুধার যন্ত্রনায় হাহাকার করা কাউকে খাবার দেওয়া হয় নি।
এক কথায় অতিথিদের অভিশাপ নিয়েই যাত্রা শুরু করল বেওয়ান

জাহাজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করেন শিল্পী রবি চৌধুরী, লুইপা ও চট্টগ্রামের মেয়ে লিজা।
মির্জা তারেক নামের এক যাত্রী বলেন, ক্ষুধার তাড়নায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি চাপা পড়ে। অনেকের আনন্দ যেন ‘নিরানন্দে’ পরিণত হয়।
এদিকে, কর্ণফুলী জাহাজে করে কক্সবাজার থেকে রাত ১২ টার দিকে খাবারের প্যাকেট নেয়া হয়। আমন্ত্রণ ও চাহিদার অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় তাতেও সংকট থেকে যায়। এভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাটে রাত আড়াইটার দিকে যাত্রীদের নামানো হয়। ওই সময় গাড়ী না পেয়ে যাত্রীদের পড়তে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে ফিরে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী শীপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ বলেন, উদ্বোধনের দিন হিসেবে একটু মিস ম্যানেজমেন্ট হয়েছে। লোক বেশি হলে মারাও যায়। এখানে এমন ঘটনা তো ঘটে নি। দু’য়েকদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রথম দিন হিসেবে লোকজন অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। তবে, শিপে কর্মরতদের প্রশিক্ষণেরও অভাব ছিল।
তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা ৩০০ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তবু ৭০০ লোকের জন্য খাবার রেডি ছিল। সেখানে ১২০০ থেকে ১৪০০ মতো গিয়েছে। লোকজন বেশী হওয়ার কারণে যা হবার তাই হয়েছে। তবু আমরা সাধ্য মতো মেহমানদারির চেষ্টা করেছি। তিনি আরো বলেন, শিপেই ২০০০ পিঠা বানিয়ে খাওয়ানো হয়। মিস ম্যানেজমেন্টের কারণে পানি দিতে একটু দেরি হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ বলেন, খাবার সংকট পড়লে শহর থেকে অর্ডার করা হয়। রাতের বেলায় পৌঁছতে দেরি হওয়ায় অনেকে বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছে।