আনম রফিকুর রশীদ


বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয় পতাকার বিকৃতি । শিক্ষামন্ত্রীত্বে নেই শিক্ষাবিদ। জাতির জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা !

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্যোগে প্রকাশিত বৈশ্বিক জ্ঞানসূচক ২০২০-এ বাংলাদেশের অবস্থান ২৩৮ টি দেশের মধ্যে ১১২ তম। এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। জরিপটি শুধু বাংলাদেশের জন্য লজ্জাস্কর নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিতান্ত উদ্বেগজনক।

জাতীয় পতাকা দেশের সর্বোচ্চ মর্যাদার প্রতীক। গাঢ় সবুজের মধ্যখানে বুকবরাবর রক্তাভ তেজোদীপ্ত স্পর্শকাতর অনুভূতি, এই অনুভূতি বাঙালি জাতির অহংকার।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জাতীয় পতাকার বিকৃতিরুপ প্রদর্শন করে কী ইঙ্গিত দিলেন, দেশপ্রেমী জনগণ তা দেখার প্রয়োজনবোধ করেননি, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাতীয় পতাকার অবান্তর উপমা, অবাঞ্ছিত তুলনা উপস্থাপন করে তারা বালখিল্যের পরিচয় দিয়েছেন।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লোকে এখন উপহাস করে বলে টুটু জগন্নাথ। গ্রাম অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারা দেখলে মনে হয় সম্রাট আকবরের পাঞ্জাগানা। মাটিতে বসিয়ে পড়াবে নাকি দাঁড় করিয়ে, নেই কোলকিনারা।

সবচেয়ে বেহাল দশা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাংলাদেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংখ্যা পাঁচ লাখ। তারা সরকার থেকে শতভাগ বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা ভোগ করেন।
তাদেরকে সরকারের নিকট জবাবদিহি করতে হয় না এবং সরকারের কোন কর্তৃত্ব তাদের উপর বর্তায় না।
যত অনিয়ম ও বিশৃংখলা করুক না কেনো তাদেরকে বদলির কোনো ব্যবস্থা বা ক্ষমতা সরকারের নিকট নেই। শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবকের পক্ষ থেকে বদলির জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানানো হলে, আমলারা ছলচাতুরি অজুহাতে এড়িয়ে যান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাঘববোয়ালদের সাথে সচিবালয়ের আমলাদের যোগসূত্রের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় শিক্ষক নেতা প্রিন্সিপাল শাহজাহান আলম সাজু বদলির দাবিটি উপস্থাপন করেন। মাননীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ অপরাপর সদস্যবৃন্দ তাতে সমর্থন প্রদান করেন। মাননীয় মন্ত্রীও সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু শুধু একজন আমলার গড়িমসির কারণে দাবিটি আলোর মুখ দেখেনি। মাননীয় মন্ত্রী নিজের সুপ্রিম পাওয়ার বাস্তবায়নে ব্যর্থ। গোছাতে পারেননি আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের দুর্নাম।

ইংলিশ মিডিয়াম বা কেজি স্কুল নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদেরকে ভারবাহি রোবটে পরিণত করছে। ব্যাগভর্তি পুস্তকের ভারে নুয়ে পড়ে, জীবনে কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।

জ্ঞানসূচকের তলানি থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার মান টেনে তুলতে একজন দক্ষ ও দৃঢ়চেতা শিক্ষামন্ত্রী দরকার। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একজন চিকিৎসক। বৈশ্বিক মহামারী করোনার এই দুর্দিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হবে উনার জন্য উপযুক্ত স্থান।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও শিক্ষার হারানো গৌরব ফিরে পাক, ঐকান্তিক কামনা।


লেখক : আনম রফিকুর রশীদ, কবি