মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমদ। ৯০ বছর বয়সে গত ১৭ ডিসেম্বর ভোর পৌনে ৬ টার দিকে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।

রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমেদ এর নামাজে জানাজা গুলশান ১ নম্বর জামে মসজিদে একইদিন জোহরের নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

রিজিয়া আহমেদ ছিলেন-পাকিস্তান সরকারের সাবেক কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রী, সাবেক এমএনএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মরহুম মৌলভী ফরিদ আহমদ এর সহধর্মিনী।

জীবন সংগ্রামী রত্নগর্ভা মরহুমা রিজিয়া আহমদ এর ৪ পুত্র সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান মোহাম্মদ হারুনুজ্জামান আমেরিকা প্রবাসী অধ্যাপক, দ্বিতীয় সন্তান মরহুম এডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, তৃতীয় সন্তান মোহাম্মদ কামরুজ্জমান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অধ্যাপক এবং কনিষ্ঠ সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। একমাত্র কন্যা জাকিয়া আনাম একজন নারীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। আজ তাঁর ৫ সন্তানই নিজ নিজ অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত। রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমেদ এর একমাত্র জামাতা মাহবুব আনাম বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সহ সভাপতি ও দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি। মহিয়সী নারী মরহুমা রিজিয়া আহমদ কক্সবাজার কলেজ ও কক্সবাজার আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মরহুম স.আ.ম শামশুল হুদা চৌধুরী ও কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে এর সাবেক সভাপতি মরহুম গোলাম মওলা চৌধুরীর ছোট বোন। তিনি ছিলেন, পেকুয়ার বিশিষ্ট জমিদার মরহুম সিরাজুল হক চৌধুরী ও গুলনাহার বেগমের কন্যা।

বৃহস্পতিবার ১৭ ডিসেম্বর অসাধারণ মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন রিজিয়া আহমেদ এর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, ত্যাগী নেতা আবদুল খালেক তাঁর নিজের ফেসবুক আইডি-তে রিজিয়া আহমেদ এর একটি ছবি দিয়ে কৃতজ্ঞতা মূলক একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার ঐতিহ্যবাহী বুনিয়াদি পরিবারের কৃতি সন্তান আবদুল খালেক এই আদর্শ মা’র নিকট পরম কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অপারেশন
সার্জলাইট পরিচালনা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন এদেশের নিরীহ মানুষের উপর বর্বর নির্যাতন ও তাদের খুন করছিলো, তখন আবদুল খালেক ও তার পুরো পরিবারকে রিজিয়া আহমেদ তাঁর ঢাকার ধানমন্ডির বাসাতে মায়ের মমতায় নিরাপদে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক সফল কমিশনার, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক সেই কালো রাতের স্মৃতির কথা মনে করিয়ে রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমেদ এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও মরহুমাকে জান্নাতের বাসিন্দা করে দিতে আল্লাহতায়লার দরবারে প্রার্থনা জানান।

অদম্য মনোবলসম্পন্ন স্পষ্টবাদী আবদুল খালেক এর ফেসবুকে প্রদত্ত স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো :

“রত্নগর্ভা মা রেজিয়া আহম্মেদ, যার আঁচলের “মাঝে“ ৭১ সেই ভয়াল অপারেশন
সার্চলাইট, বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহীনির নির্মম গনহত্যার শিকার ঢাকাবাসী,
সেই উত্তাল রাত পেরিয়ে ২৬ শে মার্চ আমি এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যদের  উনি ধানমন্ডির বাসায় আশ্রয় দিয়ে আল্লাহর অসীম রহমতে আমাদের নিরাপদে রেখেছিলেন —“
আমাদের পরম আদর এবং যত্ন করে এই পরম মমতাময়ী খালাম্মা আমাদের আদরের আঁচলে ঢেকে রেখেছিলেন —-
উনার মৃত্যুতে আমি, আমার পরিবার শোকাহত -।
হে পরম দয়ালু আল্লাহ্ ——
উনাকে আপনি বেহেস্তের মেহমান হিসাবে কবুল করুন”