সিবিএন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল সম্মেলন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টায় এ বৈঠক শুরুর কথা রয়েছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সময়ের পরীক্ষিত দুই বন্ধু দেশ ২০২১ সালে বড় কিছু অনুষ্ঠান যৌথভাবে পালন এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা আরো জোরদারের অপেক্ষায় রয়েছে।

সম্মেলনের পর বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো প্রসারিত করে ঢাকা-দিল্লির ‘মজবুত ও ঐতিহাসিক’ সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করবে।

বাংলাদেশ এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে এবং আগামী ২০২১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ও ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর উদযাপন করবে।

ভার্চুয়াল সম্মেলনটির পর একই দিনে সমঝোতা স্মারক/প্রটোকল সই অনুষ্ঠান হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘চার-পাঁচটি’ নথি সই হতে পারে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমি বৈঠকের আগে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ছাড়াও স্বাক্ষর করার জন্য চার-পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি টেবিলে রয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক শেষে দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংবাদ সম্মেলন করবেন।

বৃহস্পতিবার হাতি সংরক্ষণ/সুরক্ষা, বরিশালে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপন, কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প এবং জ্বালানি (হাইড্রোকার্বন) খাতে সহযোগিতা নিয়ে নথি সই হতে পারে।

সেইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।

সম্মেলন সামনে রেখে বাংলাদেশ জানিয়েছে, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে দুই দেশ সব মানুষের কল্যাণে এক নিরাপদ দক্ষিণ এশিয়া প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা দরকার তা হলো আমাদের লোকজনের ইতিবাচক মানসিকতা। সমানভাবে আমাদের দরকার পরস্পরের উদ্বেগ, ঝুঁকি ও দুর্বলতার পাশাপাশি সুযোগগুলো বুঝতে পারা।’

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে হতে যাওয়া এ সম্মেলনটিকে বাংলাদেশ দেখছে দুই দেশের মধ্যকার অভিন্ন ইতিহাসের প্রতি যৌথ অঙ্গীকারের নিদর্শন হিসেবে।

ভারত জানিয়েছে যে দুই প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুরো বিষয়গুলো নিয়ে ‘বিস্তারিত আলোচনা’ করবেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) সোমবার জানায়, বৈঠকে দুই নেতা কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা আরো জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন।

ভারত ও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে বলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক সরকারি সফরে ভারতে গিয়েছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালের মার্চে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।

উভয় নেতা মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালীন নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন বলে জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছিলেন, বৈঠকে পানি ও সীমান্তসহ বড় বড় যতগুলো সমস্যা আছে সেগুলো বাংলাদেশ উত্থাপন করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের বড় বড় যতগুলো সমস্যা আছে সেগুলো উত্থাপন করা হবে।…বেশ কয়েকটি ‘কুইক ইমপেক্ট’ রাখার মতো প্রকল্পেরও উদ্বোধন করা হবে।”

বৈঠক চলাকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগের পুরানো চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল সংযোগ পুনরায় উদ্বোধন করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বৈঠকে বিজয়ের মাস বড় আকারে উঠে আসবে। কারণ এ বিজয় ভারতের পক্ষেও এক বিজয়, কেননা তারা বাংলাদেশকে বিজয় অর্জনে সাহায্য করেছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যে অবদান রেখেছিলেন তা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।’

‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা ঐতিহাসিক ও রক্তের। ভারত আমাদের সব সময়ের বন্ধু। আমাদের বিজয়ে তাদেরও যথেষ্ট অহংকার করার কারণ আছে,’ বলেন আবদুল মোমেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবিত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত ও যুক্তরাজ্যের তৎকালীন সরকারের অবদানের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।’

ড. মোমেন বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সোনালি অধ্যায়ে বিরাজ করছে। দুই দেশের মধ্যকার এলবিএ ও সমুদ্র সীমাসহ বিভিন্ন ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে নজির স্থাপন করেছে।’

‘দুই দেশই বিশ্বাস করে যে আলোচনার মাধ্যমে সব বিষয়ের সমাধান করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্যা সমাধানে তাঁর নেতৃত্বের পরিপক্কতা দেখিয়েছেন,’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী বছরের ২৬ মার্চ একটি স্বাধীনতা সড়ক চালু করা হবে।

ওই সড়কের ভারতের অংশটি চালু আছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এতে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরকে যুক্ত করা হবে। এ সড়কটি দুই দেশের মধ্যে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।’

আগামী বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যৌথভাবে উদযাপনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এই আমন্ত্রণটি নীতিগতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চে দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ভার্চুয়াল বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী যোগ দিয়েছিলেন।